Friday, 6 May 2022

মধ্যবিত্তের পরম্পরা --নারায়ণ রায়


মধ্যবিত্তের পরম্পরা --নারায়ণ রায়


ছোট্টবেলায় পাড়ার নীরেনদার দোকানে

বোয়েম ভর্তি সাজানো লেবু লজেন্স।

পরাধীন মনটা চাইতো, কিনি আর খাই,

বাবা বলতেন, ওগুলো খেলে পেটে কৃমি হয়।

মনে মনে ভাবতাম, যখন স্বাধীন হ'ব

তখন দু'পকেট ভরে কিনবো আর খাবো,

তখন তো জানতাম না যে, 

আমি কোনদিনই স্বাধীন হ'ব না।

আমার বাবাও কোনদিন স্বাধীন ছিলেন না,

তার বাবাও ছিলেন না।


কলেজে পড়ার সময়ে বন্ধুরা বলতো

চল, দিলখুসের কাটলেট খাবো,

মুখে বলতুম ক্ষিধে নেই,

আর মনে মনে ভাবতুম, যখন ক্ষিধে পাবে,

তখন দুপ্লেট ভর্তি কাটলেট 

আর কবিরাজি খাবো।

তখন তো জানতাম না যে,

আমার কোনদিনই ক্ষিধে পাবে না।

এখন মনে পড়ে, আমার বাবারও

কোনদিন ক্ষিধে পেত না,

তার বাবারও ক্ষিধে পেত না।


সঞ্চালি বলত, তোকে আমার খুব ভালো লাগে,

আমি  বলতাম, আমার ভালো লাগে না।

মনে মনে ভাবতাম যখন আমার খুব প্রেম পাবে,

তখন তোকে আমি খুব, খুব করে ভালবাসবো,

তখন তো জানতাম না যে, 

আমার কোনদিনই প্রেম পাবে না।

আমার বাবা-মাকে কোনদিন 

পাশাপাশি বসে একটু গল্প করতেও দেখিনি,

তাদের বাবা-মা'দেরও 

নিশ্চয়ই কোনদিন প্রেম পেত না!


বিয়ের পর বৌকে বললাম, পুজোর ক'দিন

নাইবা ঠাকুর দেখলে! বরং ওই কদিন

কাজ করলে কিছু টাকা পাবো,

তোমার একটা শাড়ি হবে।

ঠাকুর না হয় পরের বছর দেখবো।

তখন তো জানতাম না যে,

ঠাকুর আমার কোনদিনই দেখা হবে না!

আমার বাবা-মাও কোনদিন 

ঠাকুর দেখতে বেরোয় নি,

তাদের বাবা-মাও

কোনদিন ঠাকুর দেখে নি।


ছেলে বললো, বাবা ইলিশ মাছ খাবো,

আমি বললাম, দূর বোকা ইলিশ খেলে

পেট খারাপ হয়।

তার চেয়ে বরং চল, আজ রাতে আমরা

বেগুন পোড়া দিয়ে মুড়ি খাই।

মনে পড়ে বাবা বলতেন, 

কারখানার লক আউটটা উঠলেই 

একটা মাছের মুড়ো কিনবো,

মাছের মুড়ো দিয়ে, পুঁইশাক খাবো।

বাবার আর কোনদিনই মুড়ো দিয়ে

পুঁইশাক খাওয়া হয়নি,

তার বাবারও নিশ্চয়ই খাওয়া হয়নি।


অথচ বংশের পরম্পরা তো মানতেই হবে,

আজ যখন আমি অসুস্থ হয়ে প'ড়লাম;

জ্ঞান হয়ে দেখি, শুয়ে আছি

হাসপাতালের দোতলার তিন নং বেডে,

কি আশ্চর্য আমার বাবাও ছিলেন 

এই হাসপাতালের এই একই বেডে,

আর সেদিনও ছিল আজকের মতই 

পাশের পর্নমোচী গাছটা পত্রহীন।

বাবা আর বাড়ি ফিরে যাননি,

শুনেছি তার বাবাও এই হাসপাতালের 

এই বেডেই........।

তবে কি আমিও..........?

1 comment:

Anonymous said...

অসাধারণ

অদিতি ঘটকের দুটি কবিতা--

অদিতি ঘটকের দুটি কবিতা-- জীবাশ্ম আর পাপোশে ধুলো ঝেড়ে ঘরে ঢুকি না  কারন ধুলোই আমার আবাস আর আমি সেই ধুলোর মধ্যে মিশে থাকা জীবাশ্ম ...