Friday, 6 May 2022

তৈমুর খানের দীর্ঘ কবিতা-- অরণ্যশহরে শিকার কাহিনি


তৈমুর খানের দীর্ঘ কবিতা--
 অরণ্যশহরে শিকার কাহিনি



 আমাদের বিচার-বিবেচনাগুলি
 আজ আর কেউ বেঁচে নেই
 আমরা বিশ্বাসের বিদ্যালয়ে
 তবুও পড়তে এসেছি

 আমাদের জ্ঞানের নাম বিশ্বাস
 আমাদের প্রেমের নাম বিশ্বাস
 আমাদের ধৈর্যের নাম বিশ্বাস
 আমাদের ধর্মের নাম বিশ্বাস

 আমরা কল্পনার কাছে যেতে যেতে
 বিশ্বাসকেই সঙ্গে নিয়ে গেছি

 চারিদিকে উচ্ছ্বাসে উচ্ছ্বাসে
 ভেসে যাচ্ছে নৌকারা
 নৌকায় ভরে আছে শূন্যতা
 শূন্যতার ধ্বনি-প্রতিধ্বনিতে কলরোল

 শূন্যতা আসলে জীবনের উচ্চারণ
 জন্ম থেকে মৃত্যু একটি সরলরেখা
 সরলরেখাকেই আমরা তীর্যক দেখি
 কেউ কেউ বৃত্ত অথবা বৃত্তচাপ

 জীবনের দেয়াল ধ্বসে পড়ে
 কান্নায় কান্নায় নোনা ছাপ
 আত্মঘাতী বাঁশি নীরবেই বাজে
 কখনো কখনো আত্মউৎসব

 চারিদিকে আলো পড়ে
 আলোকিত সাম্রাজ্যের দৃশ্য অলৌকিক
 তবুতো অন্ধকারের বিড়াল আসে
 বিড়াল শিকার করে পূত মূল্যবোধ

 'পূত' শব্দটি আজও কেন বেঁচে আছে?
 আমাদের ইন্দ্রিয়গুলি বৈধ কলঙ্কের
 তীব্রতা ধারণ করে
 বৈভবের চিকন সমারোহে
 রোজ উলঙ্গ যাপন করে ফেরে
 আমাদের দুর্জয় স্বাধীনতা
 স্বমেহনে সম্মোহন পায়

 যদিও সতর্কতা বিষাদের পর্দায়
 উন্নয়নের বিজ্ঞাপন ঝলমল করে
 মানবিকজন্তুর অরণ্যশহরে
 শুধু শিকার কাহিনির গল্প রচিত হয়

 আমরা বিজ্ঞাপনের নিচে দাঁড়াই
 বিশ্বাসের হাত প্রসারিত করি—
 আশ্চর্য! আমাদের কোনো হাত নেই
 আমরা সবাই ঠুঁটো, যদিও কেউ জগন্নাথ নই

 প্রদীপ জ্বালি একে একে
 আলো-অন্ধকারে দৃশ্য তৈরি হয়
 আমরা বকের মতো ঠোঁটে
 কেবল কথা শিকার করি

 কথারা সবাই মাছ
 অনুভূতির আঁশে ঢাকা শরীর
 শব্দের চোখে চোখে তাকায়
 আমরা শুধু কথা খাই
 কথা খেয়ে বাঁচি

 লরি লরি হা-হুতাশ আসে
 রাষ্ট্রীয় রেশনে তাই বিলি হয়
 কর্তব্যের দাঁড়িপাল্লা ওঠে আর নামে
 আমরা সবাই ভালো থাকি লকডাউনে!

 ক্ষুধার্তকে এখন সবাই হাস্যরস দেয়
 তৃষ্ণার্তকে ফুলেল তেল
 ধর্ম চেনায় হত্যাকারী
 মৃত্যুকে শেখায় বাঁচার দায়

 সবই তো নিলাম হচ্ছে
 বসন্ত নিলাম হচ্ছে,বসন্তের কোকিলও
 জীবনকে তবুও বলছি:
 মাঝে মাঝে রিচার্জ করে নিও!

 অনেক খরচের ভিড়ে
 আমাদের প্রিয় ধনুর্ধর
 সব তীর ছোঁড়ে হাস্যকর
 তীরের আঘাতে মাথা তোলে মিথ্যাচার

 মিথ্যাচারের সঙ্গে বিবাহ আমাদের
 সন্তান-সন্ততি, চাকরিসূত্র, অর্থনীতি
 আর দ্রব্যমূল্যের বাজার
 পেট্রোল-ডিজেল-গ্যাস ঘরকন্না সমাচার

 সন্দিগ্ধপ্রবণ বিস্ময়ে চোখ মেলে চায়
 পাথরে পাথরে ফুল ফোটে
 ওড়ে সব পিতল-লোহার প্রজাপতি
 পরাগ সংযোগে তবে কীসের জন্ম হয়?

 বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানী আর কাঙ্ক্ষিত মৌমাছি
 সবাই রূপকথা থেকে বেরিয়ে এসে
 সভ্যতার উঠোনে বসেছে
 আমরা সেই রাষ্ট্রীয় মৌচাক থেকে
 মধু নিতে এসেছি সবাই

 আমরা নতুন মধুসূদন
 মধুহীন করো না গো তব মনঃকোকনদে!

 বিশ্বাসের অন্ধকারে জেগে ওঠে মৃত শেয়ালেরা
 আমাদের ইজ্জত খায়
 ছেঁড়া ও ক্ষত হওয়া নষ্ট ইজ্জতগুলি
 আমরা বিক্রি করব বলে হাটে যাই

 সব হাট বকশীগঞ্জে পদ্মাপারে
 ইজ্জত সাজাই সব থরে থরে
 খোলা ইজ্জতের ঘ্রাণ পেয়ে
 ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি ওড়ে 

 কিনু গোয়ালার গলিতে রাতবিরেতে
 বাঁশি ওঠে বেজে
 আকবর বাদশাও যায় হরিপদ কেরানির সাথে
 হাসপাতালগুলি খালি নেই
 কান্নার লোকও পাওয়া যায় না ভাড়াতে 

 বেঁচে থাকাকে আলো দেখাতে এসেছে কারা?
 সন্দিগ্ধ,দ্যাখো তো— 
 তাদের হাতেও ফাঁদ আছে নাকি মানুষ-ধরা?
 এখনতো পোকামাকড় সবাই আমরা!

 সবাই কাঁধ তুলে দাঁড়াতে চায়
 সবাই আকাশ ছুঁয়ে দেখাতে চায়
 কোথায় চাঁদ আর কোথায় মঙ্গল গ্রহ
 সবাই কূপ খনন করে ঢেকে রাখে দেহ

 বিপ্লব আসবে সবাই প্রচার করে খুব
 বিপ্লবেরও কাম আছে,কামকেলি আছে
 যেমন ধর্মের লিঙ্গে ঘোষণা হয় মাঙ্গলিক
 যেমন সাপের ওঝাও সাপ ধরে

 ভাঙা সম্পর্কগুলি জোড়া দিতে দিতে
 বিবেক চৈতন্য আর মর্মের সুতোতে
 কেবলই টান পড়ে
 ক্ষত হয় আঙুলগুলি
 প্রেমকে পারি না ছুঁতে রক্তাক্ত হাতে…



**তৈমুর খান, রামরামপুর (শান্তিপাড়া), ডাকঘর :রামপুরহাট, জেলা বীরভূম, পিন কোড ৭৩১২২৪, পশ্চিমবঙ্গ ।ফোন নম্বর ৯৩৩২৯৯১২৫০

1 comment:

tapaskiran ray said...

তৈমুর খানের দীর্ঘ কবিতাটি পড়লাম। তার লেখা অনেক সুন্দর সুন্দর কবিতার মধ্যে এটিও একটি। বাংলা ভাষার অনেক পত্রপত্রিকাতে তার আধুনিক ভাবাপন্ন এ ধরনের কবিতা আমরা খুঁজে পাই। কবিকে জানাই অনেক ধন্যবাদ।

অদিতি ঘটকের দুটি কবিতা--

অদিতি ঘটকের দুটি কবিতা-- জীবাশ্ম আর পাপোশে ধুলো ঝেড়ে ঘরে ঢুকি না  কারন ধুলোই আমার আবাস আর আমি সেই ধুলোর মধ্যে মিশে থাকা জীবাশ্ম ...