শাহীন রেজার একগুচ্ছ কবিতা--
কবি
বাতাসের ঘর তাকে ডাকলে সে ফিরিয়ে নিলো মুখ–
বললো, যে ঘরে কপাট নেই তালা নেই ; সে আমার নয়।
জলের প্রহর বাড়ালে পা, দূরে সরে গিয়ে সে জলান্ধ যুবকের মতো মাথা নাড়তে নাড়তে জানালো, স্রোতের শ্যাওলার চেয়ে বৃক্ষ অনেক বেশি বিশ্বস্ত আর প্রার্থিত।
যখন পাখিরা তুললো ডানা, আর্তনাদ ধ্বনিত হলো তার কণ্ঠে– উড়ালের চেয়ে অনেক আন্তরিক প্রিয় রমণীর উর্বরতায় মাথা গুঁজে থাকা।
ফিরে গেলে বাতাস নদী জল
ইচ্ছে ভাঙার কষ্টে তখন সে কেবল একজন কবি–
যে শুধু সূর্য খুঁজতে থাকলো শব্দ খুঁজতে থাকলো ।
হালখাতা
আলেয়ার আলো ছুঁই নি বলে কি জীবনের সব চেনা
হলো শেষ আজ ফুরালো আঁধারে যতটুকু লেনাদেনা
বোশেখের চিঠি লিখেছে মাধবী ডাহুকীর ধরে হাত
চাঁদের ছোঁয়াতে আসমানে ভাসে লীলাময় ঘন রাত
মেঘের মিনারে সারিসারি সব ব্যাঙাচির লুটোপুটি
জীবন খুঁজেছে জীবনের কাছে এতোটুকু এক ছুটি
বছরের শেষ সব শোধবোধ সবুজে অবুঝ পাতা
নতুন হিসেবে আঁকা হবে আজ সময়ের হালখাতা।
বৈশালী পলিতে উর্বর পৃথিবী
ছেলেটি বলল, ' হ্যাঁ ' ; মেয়েটি, ' না '।
' না 'এবং ' হ্যাঁ ' এর এই দ্বৈরথে লজ্জা হারাল চাঁদ, মেঘের ঝালর সরিয়ে সে হাসল অট্টহাসি এবং ঠিক তখুনি খাটিয়ার নীচ থেকে তারস্বরে ডেকে উঠল একটি কুনোব্যাঙ আর সরসর শব্দে ঝরাপাতা মাড়িয়ে অচিনের আহ্বানে উত্তরে ছুটল একটি দুধরাজ।
তিরতির তিস্তা উতল হল চিতল স্পর্শে এবং তেত্রিশ হরিণের গান শুনতে শুনতে মাতাল প্রজাপতি গায়ে মাখল বৈধব্যবেশ।
'না' এবং 'হ্যাঁ র সংগ্রামে দুই শিবিরে বিভক্ত বাতাস ঝড় তুলল ঈষাণে, চমকাল বিদ্যুৎ সৃষ্টি হল বজ্র এবং সবশেষে লন্ডভন্ড পৃথিবীতে শুধু বৃষ্টি শুধু জল।
বৈশাখে উড়ে গেল 'না' আর পাখা ভেঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে 'হ্যাঁ'-এর ভ্রমর খুঁজল নীল চোখ; সঙ্গমের।
মিলনে জয়যুক্ত 'না' ; জয়যুক্ত 'হ্যা'
বৈশালী পলিতে উর্বর পৃথিবী।
খুন
তোমার হাতে প্রত্যহ খুন হই আর নিহত আমার দুটো চোখ বাসা বাধে নক্ষত্রে। রোদনক্লান্ত মেঘ জানে কান্নার ভাষা, আমি শুধু ক্ষরণের ব্যথা বুকে তাকিয়ে থাকি দূরে নিশ্চল ডুমুরের দিকে। খড়ের গাদায় একদিন সূঁচছুড়ে তুমি বলেছিলে, খুঁজে আনো। আমি সারারাত সমস্ত শ্রম জড়ো করেও করতে পারিনি সেই অসাধ্য সাধন । সেদিনই প্রথম মৃত্যু আমার; শেষ পরাজয়।
No comments:
Post a Comment