Thursday, 5 May 2022

ঊশ্রী মন্ডলের গুচ্ছ কবিতা--


ঊশ্রী মন্ডলের গুচ্ছ কবিতা--


আকর্ষণ


বয়ে চলা সময়..

দে না অভয়,

দুখে ভরা রোদ..

আর করোনা আমোদ ;

সুখগুলো রয়েছে কোনখানে ?

ফুলরূপে আমারই অঙ্গনে l


ও নীলাভ আকাশ..

যদি একবার তাকাস,

দেখবি শান্ত সমাহিত-

চোখে স্বপ্ন নিহিত ;

জোছনায় ভরা অখিল..

হাসছে যেন খিলখিল |


যেন ঐ হাসি..

বাজায় মধুর বাঁশি ,

কে চলেছে বিহ্বলে..

শুনে,গহীন বনাঞ্চলে ?

হাসি কিংবা বাঁশির..

দোষ ? নাকি ইন্দ্রিয়াদির !


নাকি কারোর আহ্বানে..

ঘায়েল হলো প্রেমবানে,

সুরেরই গুন তবে..

মিলুক তারা কুণ্ঠাহীনভাবে ;

ঝরুক সব জড়তা..

ঘুচুক লাজলজ্জা অজ্ঞতা  |


ছুঁয়ে যাক ভালোবাসা..

জাগুক হৃদয়ে পিপাসা ,

বলে ধারাররূপী প্রেম..

তৃষ্ণা মিটাতে এলেম  ;

শুস্ক নদী ভরলো..

দুকূল ছাপিয়ে বইলো  |


জমেছে পলি তীরেতে..

বীজ ভরলো অঞ্জলিতে ,

সেগুলিরে ছড়িয়ে দেবে..

লোকারণ্যে জনমানসে অবিলম্বে  ;

নতুন সভ্যতা গড়বে..

ভাঙবে, আবারও জুড়বে  |


নদীর পাশেই গ্রাম...

কুটির গুলি নয়নাভিরাম ,

করছে তারা বাস..

নিচ্ছে শান্তির শ্বাস  ;

খেতে পেকেছে ধান..

এবার গড়বে সংবিধান  |


তাতে জুড়বে নতুন..

নানাবিধ নানান কায়দাকানুন ,

সমাজ হবে সুষ্ঠ..

আসবে হেথায় ঋতুশ্রেষ্ঠ ;

আবার ফুটবে ফুল...

জীবন হবে অনূকুল  |


যুগে যুগে বইবে..

কালের ধারা একইভাবে ,

রাত্রি ক্ষইবে , চনমনে-

দিনেরই অমোঘ আকর্ষনে  ;

রঙ্গশালা উঠুক ভরে..

তোমারই ক্রীড়াঙ্গনে অকাতরে |


স্বয়ংসম্পূর্ণ


দেওয়া-থোওয়া থেকে থোওয়াকে বাদ দিলাম ,

বাদ-প্রতিবাদ হতে প্রতিবাদকে চুপ করালাম,

আসা-যাওয়া থেকে যাওয়া বন্ধ রাখলাম,

ব্যক্তি-স্বাতন্ত্র্যতা থেকে স্বাতন্ত্র্যতাকে উড়িয়ে দিলাম,

জীবন হতে যৌবন..

অতীত হতে বর্তমান..|


আত্মস্মৃতি হতে স্মৃতি কেবলই সরে যায়,

সংস্কৃতি হতে স্কৃতি একেলাই চলে হায়,

রীতিনীতি হতে নীতিরে ভুলে যাওয়া -অন্যায়,

লোকসংগীত হতে সংগীত আজ নিজেরে হারায়,

মোহবন্ধন থেকে বন্ধন..

রোগনিবন্ধন থেকে নিবন্ধন..|


সমস্ত বাদ দিয়ে যা রইলো..

তা নিয়ে কী - স্বয়ংসম্পূর্ণ মানুষ,আমি এখন ?


দিনশেষে


শুনি,

দিনশেষে..

কার বাণী ? কার আহ্বান ?

সময় হয়েছে যেতে হবে প্রাতে ,

খেলা কী গো শেষ হলো এ নাট্যশালার অভিনেত্রী রূপে ;

ছিলাম অপেক্ষায় অনেকদিন..

যদিও শেষ হয়নি কর্ম,

তাতে কী..

আবার আসবো ফিরে হয়ে রঙিন ;

নতুন রূপে ভাবনায়..

চিনতে পারবে কী ?

তুমি আমায়..|


বইবো..

আনমনে ,

কাগজের নৌকারূপে ,জমা জলে,

থেমে গেলে,ঠেলে দিয়ো আমায়..

না হয় দিয়ো-একটি দার জুড়ে,দিয়ো পাল টাঙিয়ে ;

হাওয়ার টানে তরতরিয়ে..

যাবো দূর বহুদূর ,

জানিনে ? কোনখানে ? 

হয়তো'বা ভিজে চুপসে যাবো..

তুলে নিও আমায়,

রৌদ্দুরে শুকিয়ে নিয়ে..

ভাসিও গঙ্গায় |


দিলাম'কী..

দুরুহকাজ ?

ক্ষম প্রিয় মোরে আজ ,

তবুও মিনতি করি ,ভুলে লাজ ;

ভুলে যেওনা- সেই দিনের গান,কথা,হাসি,সুখ আলাপন,

যা আমরা বলেছিলাম..

আনন্দে উৎফুল্লে হেসেছিলাম,

দুলেছিলাম দোলনায়..

দোঁহে চলেছিলাম,একই রাহে ,

রেখেছিলাম হাতে হাত..

করেছিলাম একসাথে অঙ্গীকার ;

অবিচ্ছেদ্য প্রণয়ে l


প্রেমে পাগলিনী


কোথায় ? কোথায় তুমি ? প্রতিদিন খুঁজি

বনে ,কোথা লুকাইলে ! এ ছদ্মবরণ 

(বটবৃক্ষ নিজ গুঁড়ি ঝুড়িতে করে গো 

আড়াল ) কেন নিলে , কী ছিলো প্রয়োজন ?

আমাকেই চাও শুধু এড়াতে মোহন !

এখনো, কেন তবে, তুমি বেনু বাজাও

বনে বনে ? ওই সুর করে বিহ্বল

পারিনা রইতে ঘরে ,কী করি এখন !


রয়েছে ঘরেতে স্বামী, শাশুড়ি ননদ

হেথা মোরে সকলেই, রেখেছে নজরে

(যেমনে চঞ্চল মতি শিশুকেই রাখে 

সম্মুখে ) ওরা ,জেনে গিয়েছে মনোদশা

আমারই, হায় হায় কী হবে উপায় ?

যদি সবই লোকলাজ ভুলে ,বেরিয়ে

পড়ি পথে, পাবো কী আবারও দেখা !

আসবে কী ,আমার সম্মুখে আড়াল থেকে  ?


তোমারে বিশ্বাসে ভরি, মনস্থির করি

যাবো তব ডাকেই, বিধিনিষেধের

(অতিরিক্ত বর্ষার কারণে বাঁধ ভাঙে

নিমেষেই ) বেড়াজাল ভেঙ্গে,তোমারই

দর্শনে, বাজাও বাঁশুরি ধুন আবার  |

আমি তোমারই শ্রীমতি ,হয়েছি প্রেমে

পাগলিনী,ক্ষম মোরে করি গো বিনতি

দর্শন দাও,স্থান চাই তব ঐ পায় |


মন্মুখ     


" সে বলল ওহে রচয়িতা,

কারে খোঁজো..

প্রতিনিয়ত আপন রচনার ছায়ে হয়ে আত্মবেদিতা ?

কেন তারে বিষন্নতার রঞ্জনে রঞ্জিত করো ;

প্রতিনিয়ত এখনও...

পাবে কী খুঁজে তারই ঔজ্বল্য ?

পারিনি দিতে উত্তর কোনও..| "


" অতীতের পান্না খুলে দেখছিলাম..

অন্যায় অত্যাচারের চিত্র,

যা এখনও বিদ্যমান - তা আঁকছিলাম..

বললে ,এ ছবি কেন এঁকেছো সাহস নয় মন্দ  ;

আমি বললাম ,আমি আঁকিনি তুমিই এঁকেছো..

আজ কেন - করছো অপছন্দ..? "


" বলতে পারিনি আমার কথা,

তাই তো আমারই..

আঁকা ছবিতে ফুটে উঠে মনোব্যথা ;

শান্ত নির্জন লোকালয় হয়েছিল ভীত আতঙ্কিত কার ছোঁয়ায় ?

তছনছ করে দেয় জানিনা কী উল্লাসে !

জীবনযৌবন ধনমান সকলি খোয়ায়..| "


" আজ তুমি বৃক্ষরূপে দাঁড়িয়ে,

রেখেছো সম্ভাবনার সংরচনার..

সদভাবনার সংহতির অজস্র বাহু বাড়িয়ে ,

পাখিরা বেঁধেছে বসেরা ফুটেছে ফুল ফল পত্রী শাখে  ;

সুখের বাণী ভেসে বেড়ায় আজ ..

আমারই লোকমনের চোখেমুখে মন্মুখে..|"


আমার পটের ছবি


আমার চিত্তে ফোটে কলি, অলি হলাম ,

আবার দামোদরের চরও হলাম l


উড়ে যায় বিহগী দাবদাহে কান্ত দুপুরে..

ভাগীরথীর আহ্বানে খড়ি চলেছে এঁকেবেকে কলস্বরে ,

মাঝি বাইছে আপন নাও শান্ত লহরে..

দিক দিগন্ত মোহিত তারই ভাটিয়ালীর সুরে ;

বাতাসও আমোদিত হয়ে বহে,আমি দেখলাম..

আমারই পটে তা আঁকলাম |


শুনি নুপুরের কিঙ্কিনী শুষ্ক ঝরা পত্রের..

দেখি শান্ত সমাহিত ধ্যান মগ্ন রাত্রির ,

নক্ষত্রগুলি গড়ছে নকশাকাটা শাড়ি যা জরির..

চাঁদ এরই মাঝে একাকী এক যাত্রীর  ;

গীতিকার রচে গীত যা মধুর কলাম..

ঘুমিয়ে ছিলাম আজ জাগলাম |


জয়চন্ডী, ভান্ডার যেন চিরকালীন যমজ সহোদর..

শ্যামারূপার মন্দির যেন রহস্যে মোড়া চাদর ,

জয়দেবের মেলা সম্প্রীতিতে বেঁধে করে সমাদর ;

শুনেছি দেবী চৌধুরীরানীর কথা,ছিলেন ধুরন্ধর..

সকলকেই নিয়েই গৌরবান্বিত হলাম,

পূর্ণতার শ্বাস হৃদয়ে ভরলাম  |

গড়জঙ্গলের গাছগাছালির মতোই উঁচুমাথায় , আকাশ ছুঁলাম ,

প্রকৃতিসৃষ্ট তালে তাল ঠুকলাম l

1 comment:

tapaskiran ray said...

প্রত্যেকটি কবিতাই বেশ ভালো লাগলো। ইনি নিয়মিত লেখেন এবং ভাল লেখেন।

অদিতি ঘটকের দুটি কবিতা--

অদিতি ঘটকের দুটি কবিতা-- জীবাশ্ম আর পাপোশে ধুলো ঝেড়ে ঘরে ঢুকি না  কারন ধুলোই আমার আবাস আর আমি সেই ধুলোর মধ্যে মিশে থাকা জীবাশ্ম ...