ঊশ্রী মন্ডলের গুচ্ছ কবিতা--
আকর্ষণ
বয়ে চলা সময়..
দে না অভয়,
দুখে ভরা রোদ..
আর করোনা আমোদ ;
সুখগুলো রয়েছে কোনখানে ?
ফুলরূপে আমারই অঙ্গনে l
ও নীলাভ আকাশ..
যদি একবার তাকাস,
দেখবি শান্ত সমাহিত-
চোখে স্বপ্ন নিহিত ;
জোছনায় ভরা অখিল..
হাসছে যেন খিলখিল |
যেন ঐ হাসি..
বাজায় মধুর বাঁশি ,
কে চলেছে বিহ্বলে..
শুনে,গহীন বনাঞ্চলে ?
হাসি কিংবা বাঁশির..
দোষ ? নাকি ইন্দ্রিয়াদির !
নাকি কারোর আহ্বানে..
ঘায়েল হলো প্রেমবানে,
সুরেরই গুন তবে..
মিলুক তারা কুণ্ঠাহীনভাবে ;
ঝরুক সব জড়তা..
ঘুচুক লাজলজ্জা অজ্ঞতা |
ছুঁয়ে যাক ভালোবাসা..
জাগুক হৃদয়ে পিপাসা ,
বলে ধারাররূপী প্রেম..
তৃষ্ণা মিটাতে এলেম ;
শুস্ক নদী ভরলো..
দুকূল ছাপিয়ে বইলো |
জমেছে পলি তীরেতে..
বীজ ভরলো অঞ্জলিতে ,
সেগুলিরে ছড়িয়ে দেবে..
লোকারণ্যে জনমানসে অবিলম্বে ;
নতুন সভ্যতা গড়বে..
ভাঙবে, আবারও জুড়বে |
নদীর পাশেই গ্রাম...
কুটির গুলি নয়নাভিরাম ,
করছে তারা বাস..
নিচ্ছে শান্তির শ্বাস ;
খেতে পেকেছে ধান..
এবার গড়বে সংবিধান |
তাতে জুড়বে নতুন..
নানাবিধ নানান কায়দাকানুন ,
সমাজ হবে সুষ্ঠ..
আসবে হেথায় ঋতুশ্রেষ্ঠ ;
আবার ফুটবে ফুল...
জীবন হবে অনূকুল |
যুগে যুগে বইবে..
কালের ধারা একইভাবে ,
রাত্রি ক্ষইবে , চনমনে-
দিনেরই অমোঘ আকর্ষনে ;
রঙ্গশালা উঠুক ভরে..
তোমারই ক্রীড়াঙ্গনে অকাতরে |
স্বয়ংসম্পূর্ণ
দেওয়া-থোওয়া থেকে থোওয়াকে বাদ দিলাম ,
বাদ-প্রতিবাদ হতে প্রতিবাদকে চুপ করালাম,
আসা-যাওয়া থেকে যাওয়া বন্ধ রাখলাম,
ব্যক্তি-স্বাতন্ত্র্যতা থেকে স্বাতন্ত্র্যতাকে উড়িয়ে দিলাম,
জীবন হতে যৌবন..
অতীত হতে বর্তমান..|
আত্মস্মৃতি হতে স্মৃতি কেবলই সরে যায়,
সংস্কৃতি হতে স্কৃতি একেলাই চলে হায়,
রীতিনীতি হতে নীতিরে ভুলে যাওয়া -অন্যায়,
লোকসংগীত হতে সংগীত আজ নিজেরে হারায়,
মোহবন্ধন থেকে বন্ধন..
রোগনিবন্ধন থেকে নিবন্ধন..|
সমস্ত বাদ দিয়ে যা রইলো..
তা নিয়ে কী - স্বয়ংসম্পূর্ণ মানুষ,আমি এখন ?
দিনশেষে
শুনি,
দিনশেষে..
কার বাণী ? কার আহ্বান ?
সময় হয়েছে যেতে হবে প্রাতে ,
খেলা কী গো শেষ হলো এ নাট্যশালার অভিনেত্রী রূপে ;
ছিলাম অপেক্ষায় অনেকদিন..
যদিও শেষ হয়নি কর্ম,
তাতে কী..
আবার আসবো ফিরে হয়ে রঙিন ;
নতুন রূপে ভাবনায়..
চিনতে পারবে কী ?
তুমি আমায়..|
বইবো..
আনমনে ,
কাগজের নৌকারূপে ,জমা জলে,
থেমে গেলে,ঠেলে দিয়ো আমায়..
না হয় দিয়ো-একটি দার জুড়ে,দিয়ো পাল টাঙিয়ে ;
হাওয়ার টানে তরতরিয়ে..
যাবো দূর বহুদূর ,
জানিনে ? কোনখানে ?
হয়তো'বা ভিজে চুপসে যাবো..
তুলে নিও আমায়,
রৌদ্দুরে শুকিয়ে নিয়ে..
ভাসিও গঙ্গায় |
দিলাম'কী..
দুরুহকাজ ?
ক্ষম প্রিয় মোরে আজ ,
তবুও মিনতি করি ,ভুলে লাজ ;
ভুলে যেওনা- সেই দিনের গান,কথা,হাসি,সুখ আলাপন,
যা আমরা বলেছিলাম..
আনন্দে উৎফুল্লে হেসেছিলাম,
দুলেছিলাম দোলনায়..
দোঁহে চলেছিলাম,একই রাহে ,
রেখেছিলাম হাতে হাত..
করেছিলাম একসাথে অঙ্গীকার ;
অবিচ্ছেদ্য প্রণয়ে l
প্রেমে পাগলিনী
কোথায় ? কোথায় তুমি ? প্রতিদিন খুঁজি
বনে ,কোথা লুকাইলে ! এ ছদ্মবরণ
(বটবৃক্ষ নিজ গুঁড়ি ঝুড়িতে করে গো
আড়াল ) কেন নিলে , কী ছিলো প্রয়োজন ?
আমাকেই চাও শুধু এড়াতে মোহন !
এখনো, কেন তবে, তুমি বেনু বাজাও
বনে বনে ? ওই সুর করে বিহ্বল
পারিনা রইতে ঘরে ,কী করি এখন !
রয়েছে ঘরেতে স্বামী, শাশুড়ি ননদ
হেথা মোরে সকলেই, রেখেছে নজরে
(যেমনে চঞ্চল মতি শিশুকেই রাখে
সম্মুখে ) ওরা ,জেনে গিয়েছে মনোদশা
আমারই, হায় হায় কী হবে উপায় ?
যদি সবই লোকলাজ ভুলে ,বেরিয়ে
পড়ি পথে, পাবো কী আবারও দেখা !
আসবে কী ,আমার সম্মুখে আড়াল থেকে ?
তোমারে বিশ্বাসে ভরি, মনস্থির করি
যাবো তব ডাকেই, বিধিনিষেধের
(অতিরিক্ত বর্ষার কারণে বাঁধ ভাঙে
নিমেষেই ) বেড়াজাল ভেঙ্গে,তোমারই
দর্শনে, বাজাও বাঁশুরি ধুন আবার |
আমি তোমারই শ্রীমতি ,হয়েছি প্রেমে
পাগলিনী,ক্ষম মোরে করি গো বিনতি
দর্শন দাও,স্থান চাই তব ঐ পায় |
মন্মুখ
" সে বলল ওহে রচয়িতা,
কারে খোঁজো..
প্রতিনিয়ত আপন রচনার ছায়ে হয়ে আত্মবেদিতা ?
কেন তারে বিষন্নতার রঞ্জনে রঞ্জিত করো ;
প্রতিনিয়ত এখনও...
পাবে কী খুঁজে তারই ঔজ্বল্য ?
পারিনি দিতে উত্তর কোনও..| "
" অতীতের পান্না খুলে দেখছিলাম..
অন্যায় অত্যাচারের চিত্র,
যা এখনও বিদ্যমান - তা আঁকছিলাম..
বললে ,এ ছবি কেন এঁকেছো সাহস নয় মন্দ ;
আমি বললাম ,আমি আঁকিনি তুমিই এঁকেছো..
আজ কেন - করছো অপছন্দ..? "
" বলতে পারিনি আমার কথা,
তাই তো আমারই..
আঁকা ছবিতে ফুটে উঠে মনোব্যথা ;
শান্ত নির্জন লোকালয় হয়েছিল ভীত আতঙ্কিত কার ছোঁয়ায় ?
তছনছ করে দেয় জানিনা কী উল্লাসে !
জীবনযৌবন ধনমান সকলি খোয়ায়..| "
" আজ তুমি বৃক্ষরূপে দাঁড়িয়ে,
রেখেছো সম্ভাবনার সংরচনার..
সদভাবনার সংহতির অজস্র বাহু বাড়িয়ে ,
পাখিরা বেঁধেছে বসেরা ফুটেছে ফুল ফল পত্রী শাখে ;
সুখের বাণী ভেসে বেড়ায় আজ ..
আমারই লোকমনের চোখেমুখে মন্মুখে..|"
আমার পটের ছবি
আমার চিত্তে ফোটে কলি, অলি হলাম ,
আবার দামোদরের চরও হলাম l
উড়ে যায় বিহগী দাবদাহে কান্ত দুপুরে..
ভাগীরথীর আহ্বানে খড়ি চলেছে এঁকেবেকে কলস্বরে ,
মাঝি বাইছে আপন নাও শান্ত লহরে..
দিক দিগন্ত মোহিত তারই ভাটিয়ালীর সুরে ;
বাতাসও আমোদিত হয়ে বহে,আমি দেখলাম..
আমারই পটে তা আঁকলাম |
শুনি নুপুরের কিঙ্কিনী শুষ্ক ঝরা পত্রের..
দেখি শান্ত সমাহিত ধ্যান মগ্ন রাত্রির ,
নক্ষত্রগুলি গড়ছে নকশাকাটা শাড়ি যা জরির..
চাঁদ এরই মাঝে একাকী এক যাত্রীর ;
গীতিকার রচে গীত যা মধুর কলাম..
ঘুমিয়ে ছিলাম আজ জাগলাম |
জয়চন্ডী, ভান্ডার যেন চিরকালীন যমজ সহোদর..
শ্যামারূপার মন্দির যেন রহস্যে মোড়া চাদর ,
জয়দেবের মেলা সম্প্রীতিতে বেঁধে করে সমাদর ;
শুনেছি দেবী চৌধুরীরানীর কথা,ছিলেন ধুরন্ধর..
সকলকেই নিয়েই গৌরবান্বিত হলাম,
পূর্ণতার শ্বাস হৃদয়ে ভরলাম |
গড়জঙ্গলের গাছগাছালির মতোই উঁচুমাথায় , আকাশ ছুঁলাম ,
প্রকৃতিসৃষ্ট তালে তাল ঠুকলাম l
1 comment:
প্রত্যেকটি কবিতাই বেশ ভালো লাগলো। ইনি নিয়মিত লেখেন এবং ভাল লেখেন।
Post a Comment