Tuesday, 17 May 2022

অদিতি ঘটকের দুটি কবিতা--

অদিতি ঘটকের দুটি কবিতা--

জীবাশ্ম

আর পাপোশে ধুলো ঝেড়ে ঘরে ঢুকি না
 কারন ধুলোই আমার আবাস
আর আমি সেই ধুলোর মধ্যে মিশে থাকা জীবাশ্ম
 চলচ্ছক্তিহীন, মেরুদন্ডহীন
 বিগত স্মৃতির চিহ্ন
এখন ঝড়ের অপেক্ষায় থাকি
 যখন ধুলো জেগে উঠে চোখে মুখে  কর্কশ ঝাপটা মেরে জিগ্গেস করবে আমাদের দোষ কি ?

 কাব্য

আকাশের রাঙা রঙ দেখে কেউ কেউ মনে করেছিল 
 বসন্তের সোহাগী ছোঁওয়ায় শিমুল, পলাশ
 গায়ে রাতের চাদর টানতে ভুলে গেছে
 তারপর গল্প উপগল্প.......

বটগাছের শিকড় অনেক গভীর
ভারতবাসী মাত্রই মহাভারত জানে।

Saturday, 7 May 2022

সহবাস --অপূর্ব পাল


সহবাস --অপূর্ব পাল


এসো আমরা ঘুমের আয়োজন করি

চিত্তে ও চৈতন্যে পরিচ্ছন্ন হই 

শাদামেঘ বিছানায় ফুল ও ছড়িয়ে দিই খই 

আর খইয়ের মতো রজনীগন্ধা রাত, 

তুলসি তিলক ;

ধূপের গন্ধে ভরে যাক রাত্রি চরাচর 

তোমার পায়ের প্রান্তে আলতার সাজ 

কপালে কুসুম কুমকুম 

সারাগায়ে মেখে আছি তোমার শ্রীনাম ; 


এসো আমরা সহবাস আয়োজন করি

সহবাস সে তো সহযাত্রারই নাম

যাত্রাপথে আনন্দ চন্দন ছাড়া আর

কি আছে নেবার! 

এসো, 

ঘুম ঘরে এবার আমরা সমাধিস্থ হই...


______________________💕 অপূর্ব পাল

বিষন্ন আসরে--শিখা মালিক


বিষন্ন আসরে--শিখা মালিক


মনের দুর্জয় প্রাচীরে বার বার

আছড়ে পড়ছে বিষন্নতার ঢেউ ,

সাগর বাতাসে কেবলই ভেসে চলে উদ্ভ্রান্ত  বিবেক  - মৎস্য সুখের আশায়।

সময়ের প্রতিটি প্রকোষ্ঠ 

ঘুন পোকার কামড়ে আর্তনাদ 

করছে।

ওরা ফাগুনের গানে গ্রীষ্মকে টানে- যারা একদিন গ্রীষ্মের প্রখরতায় প্রেমের বসন্ত শুরু করেছিল।

রোদের আঁধারে কার যেন হাতছানি,

ওড়বার সাধ নিয়ে পাখিটা কেবলই  ডানা ঝাপটায়।

শমিত কর্মকারের দুটি অণু কবিতা --


শমিত কর্মকারের দুটি অণু কবিতা --


নাচে মন


বইছে নদী ভাসছে তরী

ডাকছে ভোরের কত পাখি। 

নতুন ভোরের সূর্যোদয়টা

সকলে আমরা ভীষণ মনে রাখি। 

সবুজ ঘাসে হাঁটতে হাঁটতে

কতো কিছু মনে পড়তে পারে।


            -------------


নব আনন্দ


আসে নতুন বছর নিয়ে আসে আশা, 

আমার তোমার মনে বাঁধে অনেক বাসা। 

কি করবো কি করবো ভেবে যে না পাই, 

বসে বসে পথ খুঁজি যে তাই। 

আসে উৎসব একের পর এক, 

এ যে আনন্দ অনেক।

Friday, 6 May 2022

বসন্ত কণ -- তাপসকিরণ রায়

 


বসন্ত কণ -- তাপসকিরণ রায়

 

অকাল হাওয়ায় বসন্ত ছুটে যাচ্ছে দেখো--

কিছু দুরন্ত হাওয়া, তুমি এলোমেলো,

অবিন্যস্ত চুলের ফাঁকের দৃশ্যাবলী।  

কখনও পলাশ খুঁজে ফিরতে ফিরতে

ঠিঠুর শীতের মাঝে কাল হারিয়ে যায়--

কিছু চাঁদ আলোয় তোমার বনজ শরীর ঘ্রাণ।  

 

অকাল বৃষ্টি খরায় ধূসর বসন্ত সময় ছুটে যাচ্ছে দেখো--  

আমাদের শরীরে সোঁদা গন্ধ, ডুবে থাকা প্রচ্ছন্ন অপরাধ,  

মনের প্রশাখায় প্রেমিকার ঘ্রাণ শুঁকি...

 

বাসি রজনীগন্ধা,

মজা বিছানার বাস, অভ্যাসের স্যাঁতস্যাঁতে আর্দ্র মন

আজ বসন্ত ছুঁয়ে আছে নিমগ্ন প্রেমের  দৈহ্য দেওয়াল,

মহুয়া ঘ্রাণের মাঝে

প্রেমিকা চেটে যাচ্ছে তোমার ল্যাশল্যাশে ঠোঁট--। 

তবু ছটাক খানেক সৌরভ

কোনও গোধূলি রঙ তোমার পলাশ ঠোঁটে না হয়

লেগে থাক এক কণ বসন্ত।

সুদীপ্ত বিশ্বাসের গুচ্ছ কবিতা


সুদীপ্ত বিশ্বাস এর গুচ্ছ কবিতা 


বাউল / সুদীপ্ত বিশ্বাস 


একলা বেশ তো আছি,একলা থাকাই ভালো

দুপুরে ডিস্কো নাচি, রাতে পাই চাঁদের আলো।

কোনো এক নিঝুম দুপুর, কিংবা গভীর রাতে

মনে আর পড়েই না তো,টান দিই গঞ্জিকাতে।

পরোয়া করব কেন? সমাজটা দিচ্ছে বা কী?

ছোট্ট জীবন আমার, তাইতো নাচতে থাকি।

পলকা এই জীবনে, কী হবে দুঃখ এনে?

চল্ না উড়াই ঘুড়ি, সুতোতে মাঞ্জা টেনে।

লাফিয়ে পাহাড় চড়ে, সাঁতরে নদীর বুকে

কবিতা দু'এক কলি আসলে রাখছি টুকে।

এভাবে কাটছে তো দিন,তোমাকে আর কী খুঁজি?

জানিনা কোথায় তুমি, আমাকে ভাবছো বুঝি?

ভাবলে কী হবে আর, নদীতে জল গড়ালে

চাঁদটা বন্ধু আমার, গভীর এই রাত্রিকালে 

গাছেরা আগলে রাখে, পাখিরা গাইতে থাকে

ঘরে আর যায় কী ফেরা? ওই যে বাউল ডাকে !


রাত

- সুদীপ্ত বিশ্বাস

জেগে বসে আছি রাতের গভীরে একা।গোটা পৃথিবীটা ঘুমে

আকাশের বুকে অনেক তারার মেলা,কিছু লোক চ্যাটরুমে

সম্পর্ক তৈরিতে এখনও ভীষণ ব্যস্ত।ওড়ে রাতচরা পাখি

শাল-পিয়ালের আধো ঘুমে ভেজা ডালে।কবিতায় লিখে রাখি

ছলাৎ-ছলাৎ শব্দে নদীটা এগোয়, সাগরের অভিসারে

পাহাড় চূড়াটা একাএকা জেগে থাকে এ রাতের অন্ধকারে

লাজুক চাঁদটা গাঁয়ের বধূর মতো ঘোমটায় মুখ ঢাকে

দু'একটা পাতা খসে যায় চুপিসারে, কেই বা হিসেব রাখে?

বনের গভীরে নিশাচর ছুটে যায়, রাতের শিশির ঝরে

খুব মমতায় পৃথিবীর সারা গায়ে। মনে পড়ে মনে পড়ে

হারানো সেসব বাঁধাবাঁধি করে বাঁচা, সুরেসুরে বাঁধা তার

গভীর গভীর অজানা অলীক দেশে প্রেম ভরা অভিসার...


কাঁটাতার

- সুদীপ্ত বিশ্বাস

আমরা পাখিরা উড়ে যাই কতদূরে

কত দেশ-গ্রাম ইয়ত্তা নেই তার

মানুষেরা শুধু ঝগড়া-বিবাদ করে

মানুষের শুধু দেশভাগ কাঁটাতার।


আমরা নদীরা বয়ে যাই কত দূরে

পাহাড়ের থেকে দূর সাগরের পার

মানুষেরা শুধু দ্বন্দ্ব-বিবাদ করে

মানুষের শুধু দেশভাগ কাঁটাতার।


আমরা আলোরা সূর্যের থেকে এসে

ভেদাভেদ ভুলে ঘোচাই অন্ধকার

মানুষেরা শুধু দ্বন্দ্ব-বিবাদ করে

মানুষের শুধু দেশভাগ কাঁটাতার।


আমরা মেঘেরা হাওয়ার ডানায় ভেসে

কত পথ চলি হিসেব থাকে না তার

মানুষেরা শুধু দ্বন্দ্ব-বিবাদ করে

মানুষের শুধু দেশভাগ কাঁটাতার।


মানুষেরা কেন কাঁটাতার ভালোবাসে?

হিংসা বা দ্বেষে কেন যে বিবাদমান!

কেন যে শেখেনি ভালোবেসে বেঁচে থাকা,

নদী বা বাতাস,মেঘ-পাখিদের গান।


বিপ্রলব্ধ


ত্রাহ্যস্পর্শে তিথিক্ষয়ে চাঁদের দেখা নেই

মঞ্জুষাতে লক্ষ্ণীকে নয়, চাইছি তোমাকেই।

তামরসের মতোই তুমি, মুগ্ধ হয়ে থাকি

ধৈবতহীন আরোহণে তিলক কামোদ রাখি।

অনিকেত শব্দচাষী বন-পাহাড়ে ঘুরি

স্মিত হাসির ময়ূখছটায় মন করেছ চুরি।

ভৈরবের ওই বিরহী সুর পাখির ডাকে ঝরে

বিপ্রলব্ধ, বিহানবেলায় বড্ড মনে পড়ে।


শব্দার্থ ঃ-

তিথিক্ষয় ~ একদিনে দুই তিথির ক্ষয় হয়ে তৃতীয় তিথির সংযোগ; ত্রাহ্যস্পর্শ; অমাবস্যা।

মঞ্জুষা ~ লক্ষ্ণীর ঝাঁপি।

তামরস ~ পদ্ম।

তিলক কামোদ হল একটা রাগ।এই রাগে অবরোহণে সাতটি সুর থাকলেও আরোহণে ধা বা ধৈবত সুরটি থাকে না।

অনিকেত ~ গৃহহীন পথিক।

শব্দচাষী ~ কবি।

ময়ূখ ~ রশ্মি।

ভৈরব হল প্রভাতকালীন একটা রাগ।ভোর বেলা গাওয়া হয় এই রাগ।

বিপ্রলব্ধ অর্থ বঞ্চিত বা প্রতারিত।

বিহানবেলা মানে সকালবেলা।


পাতকী


এসেছে প্রেমিক যুবা প্রেম ভেঙে গেলে,

পাষণ্ড পুলিশ থেকে ডাকাতের দল-

সব্বাই এসেছে, আর ঢেলে গেছে বিষ।

ধোয়া তুলসী পাতা যে, সেও তো এসেছে!

এঁটো পাতে চেটেপুটে খেয়ে চলে গেছে।

এসেছে উকিল বাবু, এসেছে সন্ন্যাসী;

মুখ পাল্টাতে এসেছে গৃহস্থ মানুষ।

এসেছে জুতো বিক্রেতা, জুতো কেনে যারা,

তারাও এসেছে সব গাঁ উজাড় করে।

কী নেবে গো দেহ থেকে? দেহে কীই বা আছে?

নর দেহে যত পাপ সব মুছে নিয়ে

রক্ত-মাংস-বিষ মেখে অন্তরে-অন্তরে

ধর্ষিত হয়েছি রাতে অযুত বছর।

সমস্ত শরীর দিয়ে বিষ শুষে নিয়ে

অপবিত্র তবু আমি কুলটা, পাতকী!


*Sudipta Biswas,(WBCS Exe.),

Nokari Uttar Para, PS-Ranaghat,Dist- Nadia,Pin- 741202

Mob-9836020902

শংকর ব্রহ্মের কবিতাগুচ্ছ--


শংকর ব্রহ্মের কবিতাগুচ্ছ--

------------------------


১)


বইছে তুফান

-------------------------


দেশে এখন বইছে তুফান , নদীতে বান 

                                   লাগিয়ে জান বাজি

হাওয়ার মুখে পাল তুলে দাও 

                                      ওগো সুজন মাঝি।


নিরুদ্দেশের পথে এখন যাদের অভিযান

                              ডুববে নাকি ভাসবে তরী

ভাবলে এখন থাকবে তাদের মান?

            বিপদ আপদ তুচ্ছ সেটা মন মানে না

জীবন নদীর শেষ যে কোথায় কেউ জানে না।


দেখছি নদী খরস্রোতা 

                     হয়তো কোথাও ভাসিয়ে নেবে

তাই বলে কি এই তুফানে তরী ছেড়ে 

                           হঠাৎ কোথাও পালিয়ে যাবে?


--------------------------------------------------------------

২)


বোঝা

-------------------


ভুল বোঝা আর সঠিক বোঝা

                                 নয়কো মোটেই খুবই সোজা,

ভুল বোঝা আর সঠিক বোঝায়

                                      দূরহ খুবই তফাৎ খোঁজা।

একটি তোমার বিপক্ষে যায়

                     অন্যটি যায় পক্ষে,সেইটুকু যা রক্ষে।


দু'টোই দেখ বোঝার মতো মাথায় চেপে রইবে,

      মাঝে মাঝেই মনটা তোমার অন্য কথা কইবে। 

ভুল বোঝা আর সঠিক বোঝা

                                 নয়কো মোটেই খুবই সোজা।


--------------------------------------------------------------

৩)


আমার ভিতরে আমি

-------------------------------


আমার ভিতরে আমি

                         ক্রমাগত নেমে যেতে থাকি

দেখি,গভীরে আমার তীব্র জ্বালা , দগ্ধ দহন

                      বুকের ভিতর এক নদী জল, 

শোকের ছায়ায় এক নিমেষে ব্যথার কাহন

                      তোমার প্রেমের সবটাই ছল?


মনের ভিতর চৈত্র শেষের শূন্যতা আজ

বুকের গভীরে আনমনা করা মেঘলা আকাশ,

হঠাৎ কেন যে নেমে আসে, দেখি বিদ্যুৎ বাজ

                      ছলনা তোমার দারুণ , সাবাস।


ভিতরে আমার একটি হৃদয় 

                                         পুড়ে যেতে থাকে

গভীরে আমার আর এক হৃদয়

                                             চুপ করে দেখে।


এতদিনে যেন মানুষটি শোকে  

                                               পাথর হয়েছে,

গভীরে আমার অন্য মানুষ

                                             জ্বলছে,পুড়ছে।


--------------------------------------------------------------

৪)


আমি ভাল নেই

---------------------------


                                 তোমার অভাবে

সমস্ত দেয়াল জুড়ে লিখে রাখব

                                'আমি ভাল নেই'

আমার নিজের ছায়া বলে উঠবে

                                 'আমি ভাল নেই' 


পরিযায়ী পাখিরা এসে এই শীতে

শিখে নেবে এই সুরে গান,

'তুমি কাছে নেই তাই,আমি ভাল নেই'।


                                 তুমি কাছে নেই

তাই সমস্ত আকাশ জুড়ে জ্যোৎস্নাকে

           মনে হয় গ্রীষ্মের প্রখর রোদ্দুর।


--------------------------------------------------------------

৫)


নেই ভাবতে নেই

---------------------------


নেই ভাবতে নেই,নেই ভাবলে ফাঁকা ফাঁকা লাগে, 

মনে কর আছে ধারে কাছে কয়েকটি নক্ষত্র ছড়িয়ে, 

            কিংবা আকাশের বুকে ভেসে আছে চাঁদ 

ইচ্ছে হলে ভাব সেও আছে ধারে কাছে

    যাকে তুমি গভীর গোপন টানে মনে প্রাণে চাও।


নেই ভাবতে নেই, নেই ভাবলে উর্বর জমিতে ঢুকে পড়ে নোনা জল

    বরং ভাব,সারা মাঠে সোনার ফসল ভরে আছে 

গাছে গাছে ফুটে আছে ফুল

বিলকুল ভরে আছে সবই,যেখানে থাকার কথা যা যা। 


তোমার একান্ত যা চাই সবই আছে মজুত ভান্ডারে

            প্রয়োজনে তোমাকে তা বুঝে নিতে হবে। 


--------------------------------------------------------------

৬)


বাউল

--------------------------------------------------------------

আমার ভিতরে,অহংকারী এক উজবুক বাস করে 

তাকে আমি মনে মনে ঘৃণা করি খুব,অবহেলা করি 

                                    তবু সে চায় না যেতে ছেড়ে

আমার ভিতরে হিংসুটে স্বার্থপর একজন থাকে 

একান্ত গোপনে যে আমাকে ভুল পথে 

ডেকে নিয়ে যেতে চায় বারবার,হাতছানি দেয়

আমি তাকে বোঝাতে পারি না কিছুতেই 

দেখাতে পারি না হৃদয় খুলে

                    আমার ভিতরে থাকা নির্লিপ্ত বাউল।


-------------------------------------------------------------

৭)


স্বাধীনতা

-------------------


আমরা কেউ কোন অভিযোগ করতে পারি না

কেন না,আমরা কেউই এর বাইরে নয় 

তবু আমরা বিস্মৃত হই না, যে আমরা ক্ষুধার্ত।


ঘাস বেড়ে ওঠে দিন দিন,জাতীয় উৎপাদন

কেউ আমরা গরু ছাগল নই, 

                                        কে বোঝাবে কাকে? 

তবু স্মৃতি বেড়ে ওঠে এবং বাড়ে ইতিহাস।


রাস্তাগুলি সবই বন্ধ,চুক্তির ধার বাড়ছে ক্রমশ  

অথচ কোন বিপদ সংকেত নেই

                                    যে যেমন খুশি হাসছে।


এখন শূন্যতা শুধু ধূ ধূ মাঠে,

        আমরা কোন অভিযোগ করতে পারি না

কারণ আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি

                                       সত্তর বছর আগেই।


--------------------------------------------------------------  

৮)


খোঁজা

---------------------


(এক).


                       যখন তোমার পাই না দেখা

ঘুরি তখন একা একা

                           বন-বাদারে কাহার তরে,

জানি না যে আমি নিজে,কীসের খোঁজে!


আবার তোমার দেখা পেলে

                        হেসে খেলে দিন যে ফুরায়

চিত্ত হারায় তোমার মাঝে,

        আমি তখন আর কিছুই খুঁজি না যে।


( দুই)


ভিতরে ছিল চাঁদের আলো     বাইরে অন্ধকার

খোলা ছিল সেদিন তোমার     মনের যত দ্বার।

কোন চাবিতে খুলে ছিল        জানা হয়নি আর

সেই চাবিটা হারিয়ে গেছ     খোঁজ পাইনি তার।


খুঁজে বেড়াই সেটাই এখন

                       হারিয়ে গেছে কোথায় সে ধন

খুঁজছি আমি সেটাই শুধু      সারা জীবন ধরে  

গ্রাম ছাড়িয়ে  শহর ছেড়ে    বাইরে এবং ঘরে।


--------------------------------------------------------------

৯)


অমরতা 

--------------------


কালের প্রবল স্রোতে মানুষ হারিয়ে যায় একদিন ঠিকই

        কিন্তু মানবতা থেকে যায় তার অমরতা পায় 

একটি জীবন হয়তো মৃত্যুর কাছে 

                                    সাময়িক হেরে যেতে পারে

অথচ সমগ্র মানব জীবন মৃত্যুকে অবহেলা করে

         জীবনের জয়গান গেয়ে যায় চিরকাল ধরে। 


কিন্তু মানবতা হারায় যদি হীন স্বার্থের কারণে

                              আমাদের জীবন যাপন থেকে

তাহলে মৃত্যুকে তুচ্ছ ভেবে

                  মানুষ আর অমরতা খুঁজবে কোথায়?


--------------------------------------------------------------

১০)


বিশ্ব ভাষা দিবস              

--------------------------   

 

                        

                             দিনটি একুশে ফেব্রুয়ারী

নত মস্তকে প্রাণের আবেগে 

                                 আজকে তাদের স্মরি

বাঁচাতে সেদিন বাংলা ভাষার মান

           অকাতরে যারা সঁপে ছিল নিজ প্রাণ 


তাদের অমূল্য সেই দান

                আজ পেয়েছে সারা বিশ্বে সম্মান

সগৌরবে অর্জন করেছে

                               বিশ্বভাষা দিবসের স্থান

আমরা যারা বাংলা ভাষা-ভাষি 

                                   বেড়েছে তাদের মান। 


আজ বিশ্ব ভাষা দিবসের দিনে 

                               কিংবা তার আগে পরে

ভাষার স্বাধীনতার জন্য

                            যারা আজও লড়াই করে 

তাদের কথা ভেবে 

                  আমরা সবাই উর্ধ্ব শিরে 

                  বুক চিতিয়ে করতে পারি বড়াই। 


বাংলা ভাষার প্রাণ ও মান বাঁচতে   

                                   দিয়ে ছিল যারা প্রাণ

সেই একুশে ফেব্রুয়ারী 

আজকে তাদের নত মস্তকে 

                                       হৃদয়ে স্মরণ করি।


--------------------------------------------------------------


১১)


সঙ্গী যাদের ফেসবুক

-------------------------------


                   টুকটাক বাইরের কাজকর্ম সেরে

ঢুকে পড়ি আমি টুক করে ফেসবুকের ভিতরে, 

আনন্দে কেটে যায় তাকে নিয়ে সারাদিন ধরে।


এই করেই যে কাটছে আমার দশটি বছর ধরে

        হেডমাষ্টারি থেকে অবসর নেওয়ার পরে। 


এখানে কত সুজন সখা এখানে কত সাথী, 

কালকে যাকে চিনতামও না বন্ধু রাতারাতি। 


কেউ আসে,কেউ ফিরেও যায় থাকে না চিরকাল,

বলতে পার এই সময়ে এটাই- যুগের রীতি, হাল। 


তাই, ভাবি না আর ও সব নিয়ে যে থাকে,তাকে রাখি

মনে থাকে না তাদের কথা,যায় যারা, বাদ বাদ বাকি। 


--------------------------------------------------------------

১২)


নতুন বছর আসছে বলে

-----------------------


নতুন বছর আসছে বলে,বুকের ভিতর উঠছে ঢেউ

নতুন বছর আসছে বলে নতুন করে আসছে কেউ?

আসছে বলেই নববর্ষ লাফাচ্ছ খুব মনে,

ভাবছ না তো থাকবে যে কে থাকবে না কোন জনে।

নতুন বছর আসছে বলে আকাশ বাতাস রঙিন হলো

নতুন বছর আসছে বলে কেউ কি কারও মন রাঙালো?

আসছে বলেই নববর্ষ ফুরিয়ে যাচ্ছে জীবন

এই কথাটা ভাবার সুযোগ দিচ্ছে নাকি মন। 

নতুন বছর নতুন বছর বলো তোমার নতুন খবর

নতুন বছর আসছে বলে জিনিষেরও  কি কমলো দর?

নতুন বছর আসবে যাবে তাতে তোমার আমার কি? 

আমরা তো সেই পুরনো গড্ডালিকা প্রবাহেই ভাসছি।


--------------------------------------------------------------

রবীন বসুর দুটি কবিতা--


রবীন বসুর দুটি কবিতা--

দাগ

কিছু দাগ ছিল মনে, দূরত্ব বাড়িয়ে আছে হাত
বহু দূর থেকে গ্রাম হাতছানি দিয়ে ডাকে রোজ
সেখানে বেড়ার ধারে পুঁইমাচা নটেশাক স্মৃতি
আমাকে ঘুমের মধ্যে জাগিয়েছে রূপকথা রাত।

নগরে বিষাদ জমে, সিলিংয়ে ঝুলে আছে দড়ি
অন্ধকার ভেঙে যায় বহুবর্ণ কাঁচের কোলাজ
জীবন কেন যে টানে? কেন বা ধূসরতা ছড়ায়
তারার কম্পনে মাপি অসহায় এই কানাকড়ি।

যে দাগের ক্ষত ছিল সংগোপন গভীর নিহিত
আমি তার বুকে বসি আড়াআড়ি ভাঙন ব্যাকুল
যন্ত্রণার জলছাপ টুকরো টুকরো আত্মরতি
নিজেকে ভাসাই যদি পেয়ে যাবো একান্ত বিহিত?

জানি না দাগের চিহ্ন, জানি না ক্ষয়ের খতিয়ান
আমি শুধু প্রাণে ধরি, তাকে ছাড়া মহা মুহ্যমান!

সুচতুর শরীর প্রত্যাশী

এই যে কুৎসিত মুখ, এই যে আলোর পিঠে অন্ধকার
এই গোপন গুপ্ত নখ, এই বিকৃতির হাসি হায়নার
সবটুকু গিলে খায় সময়তাড়িত এই প্রকাশ্যতা
মাঝখানে ঝুলে আছে অসভ্য লাম্পট্য ভরা অধীরতা।

বিশ্বাসের লাঞ্ছনায় পরিবার বিধ্বস্ত হয় প্রতিদিন
সমস্ত ক্রোধ উজাড় করে সম্পর্কের সিদ্ধান্ত কঠিন।
তুমি শুধু অবপাত, ভাসাও এক যুক্তিহীন হুমকি
সাজাও ব্ল্যাকমেইল ঘুঁটি সুচতুর শরীর প্রত্যাশী।

খেলেছ অনেক খেলা, নিঃশব্দে সম্মোহন বাণে আতুর 
ভিজেছে কিশোরী মেয়ে ডুবেছে মধ্যবয়স সংসার
উদ্দেশ্য নিহিত ছিল, ছিল কোন গুপ্তযোগের প্রশ্রয়
রোমান্টিকতা নয় এ এক ব্যাভিচার আমূল আশ্রয়।

তোমাকে তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গের কশাঘাত হানবে আজ সাহিত্য
করুণা কোথাও নেই, মানুষের ভালোবাসার আতিথ্য।


তৈমুর খানের দীর্ঘ কবিতা-- অরণ্যশহরে শিকার কাহিনি


তৈমুর খানের দীর্ঘ কবিতা--
 অরণ্যশহরে শিকার কাহিনি



 আমাদের বিচার-বিবেচনাগুলি
 আজ আর কেউ বেঁচে নেই
 আমরা বিশ্বাসের বিদ্যালয়ে
 তবুও পড়তে এসেছি

 আমাদের জ্ঞানের নাম বিশ্বাস
 আমাদের প্রেমের নাম বিশ্বাস
 আমাদের ধৈর্যের নাম বিশ্বাস
 আমাদের ধর্মের নাম বিশ্বাস

 আমরা কল্পনার কাছে যেতে যেতে
 বিশ্বাসকেই সঙ্গে নিয়ে গেছি

 চারিদিকে উচ্ছ্বাসে উচ্ছ্বাসে
 ভেসে যাচ্ছে নৌকারা
 নৌকায় ভরে আছে শূন্যতা
 শূন্যতার ধ্বনি-প্রতিধ্বনিতে কলরোল

 শূন্যতা আসলে জীবনের উচ্চারণ
 জন্ম থেকে মৃত্যু একটি সরলরেখা
 সরলরেখাকেই আমরা তীর্যক দেখি
 কেউ কেউ বৃত্ত অথবা বৃত্তচাপ

 জীবনের দেয়াল ধ্বসে পড়ে
 কান্নায় কান্নায় নোনা ছাপ
 আত্মঘাতী বাঁশি নীরবেই বাজে
 কখনো কখনো আত্মউৎসব

 চারিদিকে আলো পড়ে
 আলোকিত সাম্রাজ্যের দৃশ্য অলৌকিক
 তবুতো অন্ধকারের বিড়াল আসে
 বিড়াল শিকার করে পূত মূল্যবোধ

 'পূত' শব্দটি আজও কেন বেঁচে আছে?
 আমাদের ইন্দ্রিয়গুলি বৈধ কলঙ্কের
 তীব্রতা ধারণ করে
 বৈভবের চিকন সমারোহে
 রোজ উলঙ্গ যাপন করে ফেরে
 আমাদের দুর্জয় স্বাধীনতা
 স্বমেহনে সম্মোহন পায়

 যদিও সতর্কতা বিষাদের পর্দায়
 উন্নয়নের বিজ্ঞাপন ঝলমল করে
 মানবিকজন্তুর অরণ্যশহরে
 শুধু শিকার কাহিনির গল্প রচিত হয়

 আমরা বিজ্ঞাপনের নিচে দাঁড়াই
 বিশ্বাসের হাত প্রসারিত করি—
 আশ্চর্য! আমাদের কোনো হাত নেই
 আমরা সবাই ঠুঁটো, যদিও কেউ জগন্নাথ নই

 প্রদীপ জ্বালি একে একে
 আলো-অন্ধকারে দৃশ্য তৈরি হয়
 আমরা বকের মতো ঠোঁটে
 কেবল কথা শিকার করি

 কথারা সবাই মাছ
 অনুভূতির আঁশে ঢাকা শরীর
 শব্দের চোখে চোখে তাকায়
 আমরা শুধু কথা খাই
 কথা খেয়ে বাঁচি

 লরি লরি হা-হুতাশ আসে
 রাষ্ট্রীয় রেশনে তাই বিলি হয়
 কর্তব্যের দাঁড়িপাল্লা ওঠে আর নামে
 আমরা সবাই ভালো থাকি লকডাউনে!

 ক্ষুধার্তকে এখন সবাই হাস্যরস দেয়
 তৃষ্ণার্তকে ফুলেল তেল
 ধর্ম চেনায় হত্যাকারী
 মৃত্যুকে শেখায় বাঁচার দায়

 সবই তো নিলাম হচ্ছে
 বসন্ত নিলাম হচ্ছে,বসন্তের কোকিলও
 জীবনকে তবুও বলছি:
 মাঝে মাঝে রিচার্জ করে নিও!

 অনেক খরচের ভিড়ে
 আমাদের প্রিয় ধনুর্ধর
 সব তীর ছোঁড়ে হাস্যকর
 তীরের আঘাতে মাথা তোলে মিথ্যাচার

 মিথ্যাচারের সঙ্গে বিবাহ আমাদের
 সন্তান-সন্ততি, চাকরিসূত্র, অর্থনীতি
 আর দ্রব্যমূল্যের বাজার
 পেট্রোল-ডিজেল-গ্যাস ঘরকন্না সমাচার

 সন্দিগ্ধপ্রবণ বিস্ময়ে চোখ মেলে চায়
 পাথরে পাথরে ফুল ফোটে
 ওড়ে সব পিতল-লোহার প্রজাপতি
 পরাগ সংযোগে তবে কীসের জন্ম হয়?

 বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানী আর কাঙ্ক্ষিত মৌমাছি
 সবাই রূপকথা থেকে বেরিয়ে এসে
 সভ্যতার উঠোনে বসেছে
 আমরা সেই রাষ্ট্রীয় মৌচাক থেকে
 মধু নিতে এসেছি সবাই

 আমরা নতুন মধুসূদন
 মধুহীন করো না গো তব মনঃকোকনদে!

 বিশ্বাসের অন্ধকারে জেগে ওঠে মৃত শেয়ালেরা
 আমাদের ইজ্জত খায়
 ছেঁড়া ও ক্ষত হওয়া নষ্ট ইজ্জতগুলি
 আমরা বিক্রি করব বলে হাটে যাই

 সব হাট বকশীগঞ্জে পদ্মাপারে
 ইজ্জত সাজাই সব থরে থরে
 খোলা ইজ্জতের ঘ্রাণ পেয়ে
 ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি ওড়ে 

 কিনু গোয়ালার গলিতে রাতবিরেতে
 বাঁশি ওঠে বেজে
 আকবর বাদশাও যায় হরিপদ কেরানির সাথে
 হাসপাতালগুলি খালি নেই
 কান্নার লোকও পাওয়া যায় না ভাড়াতে 

 বেঁচে থাকাকে আলো দেখাতে এসেছে কারা?
 সন্দিগ্ধ,দ্যাখো তো— 
 তাদের হাতেও ফাঁদ আছে নাকি মানুষ-ধরা?
 এখনতো পোকামাকড় সবাই আমরা!

 সবাই কাঁধ তুলে দাঁড়াতে চায়
 সবাই আকাশ ছুঁয়ে দেখাতে চায়
 কোথায় চাঁদ আর কোথায় মঙ্গল গ্রহ
 সবাই কূপ খনন করে ঢেকে রাখে দেহ

 বিপ্লব আসবে সবাই প্রচার করে খুব
 বিপ্লবেরও কাম আছে,কামকেলি আছে
 যেমন ধর্মের লিঙ্গে ঘোষণা হয় মাঙ্গলিক
 যেমন সাপের ওঝাও সাপ ধরে

 ভাঙা সম্পর্কগুলি জোড়া দিতে দিতে
 বিবেক চৈতন্য আর মর্মের সুতোতে
 কেবলই টান পড়ে
 ক্ষত হয় আঙুলগুলি
 প্রেমকে পারি না ছুঁতে রক্তাক্ত হাতে…



**তৈমুর খান, রামরামপুর (শান্তিপাড়া), ডাকঘর :রামপুরহাট, জেলা বীরভূম, পিন কোড ৭৩১২২৪, পশ্চিমবঙ্গ ।ফোন নম্বর ৯৩৩২৯৯১২৫০

অঞ্জলি দে নন্দী, মমর তিনটি কবিতা--


অঞ্জলি দে নন্দী, মমর তিনটি কবিতা--


ঠাকুর


মাপরমহংসকে চেনার চেষ্টা করবে যেদিন,

নিজেকেই নতুনরূপে আবিষ্কার করবে সেদিন।

নিতে যে হবে কতগুলো জন্ম, তাঁকে চিনতে...

শুধু এটাই হোক মনুষ্য মনের চিন্তে!

তা হয় যদি -

তবে শ্রীরামকৃষ্ণ সাগরে মিলবে অবশ্যই এ জীবননদী।

ঠাকুর তো আছেন ভক্তদেরই কাছে।

শুধু সুভাবনার ওপরে কুঢাকনা পরে আছে।

নিজেকেই সরাতে তা হবে,

তাঁর কৃপা পাওয়া যাবে তবে।

কেউই জানে না আসবে সেদিন কবে?


তুমি-আমি


আমি সাগরের উচ্ছাস। 

তুমি আমার গভীরতার বিশ্বাস।

আমার নোনা নিঃশ্বাস

মেঘের সৃষ্টি।

ফের আমারই পরে ঝরে বৃষ্টি।

আমার ঊর্ধ দৃষ্টি।

আকাশের প্রতিবিম্ব আনে।

আমি উচ্ছসিত জোয়ার, পূর্ণ শশীর টানে।

আমি সমৃদ্ধ আমারই তরঙ্গ-গানে।

আমি না থামা চঞ্চল।

অনন্ত আমার জল।

তুমি আমার তলাতল, অতল।

আমি নদীর মিলন-স্থল।

আমার আছে কাছে আনার-টানার বল।

আমার মন্থনে উত্থিত হলাহল

করেছিলেন পান যিনি

নীলকন্ঠ নামে তো পূজ্য তিনি।

তাঁর কন্ঠ-পরশ আমি চিনি।



আমি হুগলীর মেয়ে


আমি ছিলুম বঙ্গের হুগলীর মেয়ে।

পূজো করতুম পুকুরে নেয়ে।

বড় হয়েছি তাজা ফল, আনাজ খেয়ে।

যখন দামোদরের বান আসতো ধেয়ে

তখন আমাকে ইস্কুলে পৌঁছতো মাঝি,নৌকা বেয়ে।

সেখানে পৌঁছে যেয়ে,

ইস্কুল শুরু করতুম প্রার্থনা গান গেয়ে।

ক্লাসে উঠতুম প্রতিবছর ফার্স্টের রেজাল্ট পেয়ে।

যখন আকাশ কালো মেঘে যেতো ছেয়ে

তখন ওপরের দিকে দেখতুম অপলক চেয়ে চেয়ে।

ভোরে ঘুম ভাঙাতো বোস্টম কীর্তন গেয়ে গেয়ে।

প্রকৃতির কোলে জীবন ছিল না একঘেয়ে।



জলের বাড়ি --অজিত কুমার জানা


জলের বাড়ি --অজিত কুমার জানা 


তাপের পিয়ন, দিচ্ছে খবর, 

মেঘ গড়ছে, জলের বাড়ি।

খালি করে জমিয়ে রাখো, 

মাটির জালা, কলসী, হাঁড়ি।।


ঝড়ের ধনুক, ছুঁড়লে তীর, 

ভাঙবে মেঘের জলের বাড়ি। 

ভাসবে মাঠ, শহর,গ্রাম,

অচল হবে, পথে গাড়ি।।


গাছেরা সব দুহাত তুলে, 

করবে শুধু রবীন্দ্র নৃত্য। 

পোড়া জামা, খুলে ঘাস,

খুশিতে থাকবে শুধু মত্ত।।


মেঘের গায়ে, কালো জামা, 

ঝুলে পিঠে কালো ঝোলা।

আকাশ কোলে মুখটি তুলে, 

নেচেই চলে বিকেল বেলা।।

এসো কিন্তু / কৌস্তুভ দে সরকার


এসো কিন্তু 


আমার মৃত্যুর খবর পেলে

সময় বের করে নিয়েও অন্ততঃ এসো।

কেউ তোমাকে চিনলো না চিনলো দরকার নেই,

তুমি তো আমাকে চেনো, জানো;

তাই এসো,

আমি ঠিক বুঝে যাবো, তুমি এসেছ।

তুমি এলে আমার পাথুরে বুকে 

প্রশান্তির পলি পড়বে কত,

শীতল অপেক্ষার ঘাস নড়ে উঠবে মৃদু।

একটি প্রেমের বোট নির্বিঘ্নে উল্টে যাবে শান্ত-স্থির জলে

অনুযোগবিহীন;

সেটুকুই মৃত্যুর সাপোর্ট, সেদিনও পেতে চাই তোমার।

সেই নিভে থাকা চোখে তোমাকে দেখব একান্তে।

তুমি যেন এক নীরব নাগরিক,

যেন কতকিছু ভুলভ্রান্তি ক্ষমাসুলভ চোখে দেখে নিচ্ছ আর সমাধা করে দিচ্ছ সমস্ত অসমাপ্ত কবিতার।

তুমি এলে শান্তিতে মরতে পারবো তারপর।

সংক্ষেপে--প্রতীক মিত্র


সংক্ষেপে--প্রতীক মিত্র


পাশ কাটিয়ে দেখেছি বারবার:

বিষয় কিম্বা ভিড়

দুটোই থাকে অক্ষত।

বাকি থাকে সামলাবার

যে বোধ সেটা যদি খায় চিড়

তারপর না হয় করেই দিলাম

হিসেব-নিকেশ না করে দাম

নিজের মাথা নত।

একটা অজুহাত তো মিলবে ভিড়ে মিশে যাওয়ার।


*কোন্নগর-712235, হুগলী,পশ্চিমবঙ্গ

ফোন: 8902518417

বৈশাখে--তীর্থঙ্কর মৈত্র


বৈশাখে--তীর্থঙ্কর মৈত্র

   

চেয়েছে কবিতা এক তপনকিরণ দাবদাহে গ্রীষ্মে;

লিখি তাই বসে ঘরে, জানলার পাট খুলে, নানা দৃশ্যে

বৈশাখ তুলে আনি,আলনায় শাড়ি, জামা, ফ্যান ঘোরে;

সামান্য হাওয়ায় নড়ে--কামরাঙা পাতা,শালিকের ঘরে

ঝোলে খড়, ফাকা পড়ে--ব্যস্ত তারা বাসা তৈরীর  কাজে। 

এখনি ফিরবে বুঝি? ঠোঁটে করে খড় কোনো... কত বাজে?

সেদিকে খেয়াল নেই আমিও ওদের মতো দৃশ্যাবলী খুঁজে

জড়ো করি কবিতায়,  খোলা জানলায় যতোটুকু পাই, বুঝে

তুলে আনি, প্রকৃতির, দৃশ্যে থাকা শব্দ, বাণী,রূপ রস কিছু;

নতুন কবিতা চাই, বৈশাখ এসেছে যে বাংলায়,ঝুলছে  লিচু;

হয়তো কোথাও গাছে,আম কাঁঠালের দেশে, রস নেই হয়?

দুরন্ত কিশোর এক,রোদে ঘোরে---পাতি হাঁস কেন ডেকে যায় !! 

২৭/৪/২০২২

কালচিত্র ।। সুনীল মাজি


 কালচিত্র  ।।   সুনীল   মাজি


এখন কোনও ছবি নেই। 

না-বালিকার তীক্ষ্ণ চিৎকারে পাখির সুর হারিয়ে যেতেই

বাংলার বুকে যত সুন্দর পটচিত্র ছিল 

সেগুলোয় আগুন ধরে গেল।

সবই টুকরো টুকরো দৃশ্য---যে মেয়েটি খুন ও ধর্ষিতা হয়েছিল,

সে এখন শশ্মান হয়ে গেছে, কয়লা হয়ে গেছে।

একটু আগে যে মেয়েটির সারা শরীর জুড়ে রোদজল খেলা করছিল,

সে এখন এই শুক্লপক্ষে ভয়ংকর অমাবস্যা।

 যার বাপ জমি বালি খাদান চুরি করতো

 তার ছেলে এখন শরীর চুরি করছে,

এখন ভোগের সীমা আর বাংলা বোতলে সীমাবদ্ধ নেই---

কেউ কারও সীমানা মানছে না,

পঙ্গপালের দল সব গাছের পাতা খেতের ফসল খেতে খেতে খেতে নবান্ন ও রাজভবনে ও আদালতে ঢুকে পড়েছে

সংবিধানের পাতা খেয়ে লোপাট করতে চাইছে প্রদেশ...


বাংলা বলে কোনও প্রদেশ নেই, তবে মানচিত্র আছে।

মদের বোতলে একটা ভাঙা মানুষ ভাঙা ভাষায় কথা বলছে :

মেয়েটি কি গর্ভবতী ছিল ? তাই কি শরীর থেকে জন্ম

আহা, প্রেমহীন এই শরীর থেকে তলোয়ারগুলো  ঝনঝন বাজছে।

এখন কোনও মিউজিক নেই---তৃতীয় ডিভিশনের স্কেচ তৈরি হয়েছে।

মিটিং থেকে যুবকটি মিসিং---পতিতা পল্লী থেকে মুভির শুটিং : মিথ্যাচার শেখো,

হিরো হতে চাইলে এই অভিনয়।

মদ এবং মঞ্চ এবং পলিটিক্স ।

এখন কোনও ছবি নেই---আত্মহত্যা নেই

সিংহের আসনে বসে এই অরণ্য সামলাতে সবগুলোই খুন---আওরঙ্গজেব খুনী ক্লিওপাট্রাও খুনী---

ইতিহাসের কঙ্কালের কোনও আত্মা নেই, ছবি নেই।

কাকের বাসায় ডিম পাড়তে পাড়তে কোকিলের প্রজন্ম একদিন কি হারিয়ে ফেলবে নিজস্ব স্বর ?

ঋতুপরিবর্তনে বসন্ত মরে গেলে দাবদাহে ছাই হতে পারে কি নিজস্ব ঘর? হয়তো জানেন ঈশ্বর!


*16 04 22 ২রা বৈশাখ ২৯/6294707505

sunilmundeswari@gmail.com

সহবাস---- শক্তিপ্রসাদ ঘোষ


সহবাস---- শক্তিপ্রসাদ ঘোষ


আমারা পরস্পরের স্বাদ নিই 

লেপটে থাকা যাপন 

ক্রিয়াপদের সাথে যৌথবাস

অলীক প্রণয়ে ঘুমিয়ে 

থাকা যাবজ্জীবন

জানার ইচ্ছার ঘ্রাণ 

সুদক্ষ ভাবে বহতা নদী

মিশে যাওয়া দিগন্তরেখা।


-------  +------- 

 মাননীয়

সম্পাদক 

নমস্কার নেবেন, একটি কবিতা  পাঠালাম,

প্রকাশিত হলে আনন্দিত হব।

শক্তিপ্রসাদ ঘোষ

রবীন্দ্রনগর,নিউটাউন 

কোচবিহার-৭৩৬১০১

মোঃ- ৯৭৩৩০১৭৭৪৯

দেনা -পাওনা--দুর্গাদাস মিদ্যা

 


দেনা -পাওনা--দুর্গাদাস  মিদ্যা


      বিকল্প রাত্রির মতো তুমি এসো

       ভালবেসো ঘন অমাবস্যা হয়ে। 

        চলাচল হোক ছলছলে নদীটির মতো। 

       হয়তো বা আমার আগোছালো সংসার

       তবু ঘর হোক শান্ত সমীর। স্বপ্নের খোলসে

       ঢাকা থাক  দুজনের ভবিষ্যৎ। যদি সহমত

       হও তবে ওত পেতে থাকো আমি কখন 

        আসবো ঘরে সব চরাচর ঘুরে।  তখন তুমি 

       সুরে সুরে ভরে দেবে আমার ক্লান্ত প্রাণ । 

        আমার ভালোবাসা হবে প্রণয়ের প্রতিদান। 

    :--------------------------------------------------------- 

                      দুর্গাদাস  মিদ্যা। 

            ২৪/৬৬ নাবালিয়া পাড়া রোড

                     কলকাতা:---৭০০০০৮। 

                 মোবাইল :--৯৮৭৪১৮১০৬৭।

লাগামহীন মন--হারান চন্দ্র মিস্ত্রী


লাগামহীন মন--হারান চন্দ্র মিস্ত্রী


মন আমাদের লাগামছাড়া

এদিক ওদিক ধায়,

কে দেবে তার পায়ে বেড়ি

লোকটি পাওয়া দায়।


এই আছে এই উড়ে বেড়ায়

সর্বদা চঞ্চল।

এ গোল ও গোল ছুটে বেড়ায়

যেন মাঠের বল।


বিরামবিহীন বাহনবিহীন

করে সঞ্চরণ

পাহাড় বনে আকাশ চাঁদে

করে বিচরণ।


এ মন আবার ধরতে পারে

ভালোবাসার লোক।

মনকে আবার বিগড়ে ফেলে

যে জন আহাম্মক।


ষড় রিপুর তাড়নাতে

মনের এমন হাল,

নিয়ন্ত্রণে রাখলে বোঝা

টানবে চিরকাল।

______________


অনিন্দিতা ঠাকুর--রঙমেশানো আকাশ আলো,


অনিন্দিতা ঠাকুর--রঙমেশানো আকাশ আলো, 


রঙমেশানো আকাশ আলো, 

নিভৃতবাসী মনের ঝিনুক 

ভেসে যাবে আকাশ বিমুখ, 

ওপারে নীলনদ অথবা সাহারা...

 ওই ঠোকাঠুকি শহরের ভীড়

যেখানে আছে শুধু লক্ষ যোজন দূরত্ব ...

জলন্ত জন্মদাগ, টকটকে লাল চেরিফল, বেগুনি ছাপের খোলস ---

থাক না সেসব কাহিনি পদ্মপাতায় মোড়া, ফুটন্ত ভাতের মতো মনখারাপি দুপুরের আহার হয়ে !! 


*ঠিকানা হেতমপুর, বীরভূম 

ফোন নম্বর -- 7001031052

@ অনিন্দিতা

রানা জামান-- আবহে বৈশাখের দাবদাহ


চৈত্রের আবহে বৈশাখের দাবদাহ--রানা জামান


চৈত্রের আবহে বৈশাখ সূর্যের আরো কাছে

খাল বিল ক্ষেত ফেটে আফ্রিকার ম্যাপ

নদীর মাছেরা ঠাণ্ডা পেতে ত্যাগ করছে জল

মেঘের মাঝেও সূর্যের দখল পাকাপোক্ত পুরো

ছাতা বিদ্ধ হয়ে উত্তাপ দংশন করে নিউরনে


ঘামের বাজার থাকলে জমে যেত ব্যবসা শ্রমিকের

গর্ত ছেড়ে সাপগুলো ছুটোছুটি করছে স্থলে

কত যে শ্রমিক ফিট হয়ে যাচ্ছে ক্ষেতের আইলে

মেঘের দঙ্গলে ছিটেফোঁটা নেই জল

বৈশাখের দাবদাহে মরে যাচ্ছে ঝিঁঝি পোকা

কূপের জলেরা দাতা হয়ে আজ নিরেট নিঃশেষ

গাছের পাতার ঝাপ্টায় পুড়িয়ে দেয় শরীরের পেলবতা


ঠাণ্ডা জল পেতে খুঁড়ে যাই মাটি অবিরাম

চেয়ে থাকি নির্ণিমেষে আকাশের বিশালত্বে

সাদা মেঘ হবে কবে পোয়াতী জলের ভারত্বে?


এক ফোঁটা বৃষ্টি পেলে ভাগাভাগি করে রেখে দেবো মনে!


**ঠিকানা:

রানা জামান

ঠিকানা: আনিলা টাওয়ার

বাড়ি#১৮-১৯; সড়ক#৩; ব্লক#আই;

বড়বাগ(ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের পেছনে) মিরপুর-২;

ঢাকা-১২১৬; বাংলাদেশ

ই-মেইল আইডি: rana2344@gmail.com

WhatsApp no: +8801715826053

মোবাইল ফোন: +৮৮০১৭১৫৮২৬০৫৩

শাহীন রেজার একগুচ্ছ কবিতা--


শাহীন রেজার একগুচ্ছ কবিতা--


কবি


বাতাসের ঘর তাকে ডাকলে সে ফিরিয়ে নিলো মুখ–

বললো, যে ঘরে কপাট নেই তালা নেই ; সে আমার নয়।


জলের প্রহর বাড়ালে পা,  দূরে সরে গিয়ে সে জলান্ধ যুবকের মতো মাথা নাড়তে নাড়তে জানালো, স্রোতের শ্যাওলার চেয়ে বৃক্ষ অনেক বেশি বিশ্বস্ত আর প্রার্থিত।


যখন পাখিরা তুললো ডানা, আর্তনাদ ধ্বনিত হলো তার কণ্ঠে– উড়ালের চেয়ে অনেক আন্তরিক প্রিয় রমণীর উর্বরতায় মাথা গুঁজে থাকা।


ফিরে গেলে বাতাস নদী জল

ইচ্ছে ভাঙার কষ্টে তখন সে কেবল একজন কবি–

যে শুধু সূর্য খুঁজতে থাকলো শব্দ খুঁজতে থাকলো ।


হালখাতা


আলেয়ার আলো ছুঁই নি বলে কি জীবনের সব চেনা

হলো শেষ আজ ফুরালো আঁধারে যতটুকু লেনাদেনা


বোশেখের চিঠি লিখেছে মাধবী ডাহুকীর ধরে হাত

চাঁদের ছোঁয়াতে আসমানে ভাসে লীলাময় ঘন রাত


মেঘের মিনারে সারিসারি সব ব্যাঙাচির লুটোপুটি 

জীবন খুঁজেছে জীবনের কাছে এতোটুকু এক ছুটি


বছরের শেষ সব শোধবোধ সবুজে অবুঝ পাতা

নতুন হিসেবে আঁকা হবে আজ সময়ের হালখাতা।


বৈশালী পলিতে উর্বর পৃথিবী


ছেলেটি বলল, ' হ্যাঁ ' ; মেয়েটি, ' না '।

' না 'এবং ' হ্যাঁ ' এর এই দ্বৈরথে লজ্জা হারাল চাঁদ, মেঘের ঝালর সরিয়ে সে হাসল অট্টহাসি এবং ঠিক তখুনি খাটিয়ার নীচ থেকে তারস্বরে ডেকে উঠল একটি কুনোব্যাঙ আর সরসর শব্দে ঝরাপাতা মাড়িয়ে অচিনের আহ্বানে উত্তরে ছুটল একটি দুধরাজ।

তিরতির তিস্তা উতল হল চিতল স্পর্শে এবং তেত্রিশ হরিণের গান শুনতে শুনতে মাতাল প্রজাপতি গায়ে মাখল বৈধব্যবেশ।

'না' এবং 'হ্যাঁ র সংগ্রামে দুই শিবিরে বিভক্ত বাতাস ঝড় তুলল ঈষাণে, চমকাল বিদ্যুৎ সৃষ্টি হল বজ্র এবং সবশেষে লন্ডভন্ড পৃথিবীতে শুধু বৃষ্টি শুধু জল।

বৈশাখে উড়ে গেল 'না' আর পাখা ভেঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে 'হ্যাঁ'-এর ভ্রমর খুঁজল নীল চোখ; সঙ্গমের।

মিলনে জয়যুক্ত 'না' ; জয়যুক্ত 'হ্যা'

বৈশালী পলিতে উর্বর পৃথিবী।


খুন


তোমার হাতে প্রত্যহ খুন হই আর নিহত আমার দুটো চোখ বাসা বাধে নক্ষত্রে। রোদনক্লান্ত মেঘ জানে কান্নার ভাষা, আমি শুধু ক্ষরণের ব্যথা বুকে তাকিয়ে থাকি দূরে নিশ্চল ডুমুরের দিকে। খড়ের গাদায় একদিন সূঁচছুড়ে  তুমি বলেছিলে, খুঁজে আনো। আমি সারারাত সমস্ত শ্রম জড়ো করেও করতে পারিনি সেই অসাধ্য সাধন । সেদিনই  প্রথম মৃত্যু আমার; শেষ পরাজয়।

উত্তর--নিরাপদ বিশ্বাস


উত্তর--নিরাপদ বিশ্বাস


আমি অনেক দিন আগে

একটা কথা তোমাকে বলেছিলাম--

তুমি শুনেও শোনো নি।

হাজার বছর পেরিয়ে আবার যখন

একটা কথা তোমাকে বোঝাতে চেয়েছি,

তুমি বুঝেও বোঝনি।


কাঠ ফাটা রোদ্দুরে ঘোর খাওয়া মানুষের মতো,

হাঁফিয়ে চলেছে তোমার ছায়া'--

দরবারের হুসেন শাহের মতো'...!

তুমি কখনো ফিরেও দেখনি।


খাসনবিশ,-মহলনবিশ কত

খেতাবি আদব কায়দা-

মণিকর্ণিকায় গাঁট বেঁধেছে,

তুমি কখনো ছুঁয়ে দেখনি;

--এই জল তরঙ্গ,নীল আকাশের নিচে

কত স্বপ্ন আঁকে,

সে স্বপ্নে কখনো তুমি ভাসনি।


রোজনামচার সালতামামি কুড়িয়ে

প্লাবন পেয়েছ যখন,

তখনও তোমাকে জিজ্ঞেস ক'রেছি,

কি পেয়েছো??

তুমি নিরুত্তর!!


সব দৃশ্যপট শেষ।

প্রশ্ন শেষ;

তখন উত্তর এল'----"তুমি"।



কৌশিক গাঙ্গুলির একগুচ্ছ কবিতা--

 


কৌশিক গাঙ্গুলির একগুচ্ছ কবিতা--

স্বপ্নের মানুষ'


অন্ধ নই, বধির নই,

নই রক্ষকের ভক্ষক হওয়ার উদাহরণ। 

দুর্ভাগ্যের সৌজন্যে দিশাহারা তবু

ভালোবাসা পেতে আর দিতে এখনো 

ভালো লাগে, প্রকৃত মানুষের সন্ধান পেতে তোলপাড় করি কত মানুষের ভিড় ও মিছিল।  আদর্শহীন আর ধান্দাবাজদের জয়জয়কার দেখেও বোকার মতন স্বপ্ন দেখি কিছু ভালোর। 

অসভ্যতা, মিথ্যার গর্জন, দুষ্টের নির্মমতা আমাকে ব্যথিত করে, চোখে আসে জল। একজন ব্যর্থ মানুষ এই সমাজে - 

অর্থ, চাকচিক্যহীন একজন মানুষ যে শুধু নিজস্ব আঙ্গিকে লিখে চলে সময়ের কবিতা, রক্ত অক্ষরে, তাতে শুধু জীবন যন্ত্রণা। 

হে দেশ, এই মোসাহেব আর ধূর্তদের ভিড়ে আমি বড় বেমানান, তবু ভালোবেসে হেরে যেতে যেতে খুঁজে পাবো স্বপ্নের মানুষ।


কাব্য


দিন গেল রাত গেল

শব্দ বহে যায়,

অক্ষর যাপনের জ্বালা

শিরায় শিরায়,

প্রেম নাহি আসে

এই শুষ্ক হৃদয়ে,

যন্ত্রণার কাব্য শুধু

লেখা হয়ে যায়।


"বসন্ত"


কি এসে গেল তাতে যদি না তাকে পাও

তবে ঘুরে ঘুরে খোঁজো খোঁজো পাবে যাকে চাও,

ভেঙে গেছে ঘর না পাও ঠিকানা

নীল লাল সাদা কালো সব চেনা,

প্রেম বিনা এ জগৎ মিথ্যা তাই

আসুক যন্ত্রণা তবু তোমাকেই শুধু চাই

কষ্ট করলে তবেই মিলবে চাহিদা যতো 

কেউ হয়না এ সমাজে কারোর মতো,

ওগো আমার বেদনায় তোমার কান্না আসে।

এই গোধূলির আলোতে দেখি যে সব সত্য ভাসে

 সবচেনা উত্তর মাখামাখি দেখো ঐ বসন্ত আসে।


"নষ্ট পদ্য " 


অহেতুক পরিবেশ দূষণ কিংবা এডস্ এসবে না মাথা ঘামিয়ে আসুন বুলাদি লুডো খেলি । মানুষ এখন হাসতে টিভিতে ভাঁড়ামো দেখে , কান্না দেখতে সিরিয়ালে ভালো চরিত্রের সততা উপভোগ করে , আদর্শ থাকে পাঠ্য বই এ আর কেউ ভালো থাকে না , ভান করে - সংবাদপত্রে সংবাদ নয় বিজ্ঞাপন দেখি , আড্ডায় পি এন পি সি আর কেচ্ছাচর্চা ও ফাঁকতালে বাতেলা প্রতিযোগিতা । লঘু , গুরু , সম্মান - অসম্মান সব গুলিয়ে গেছে , তেলিয়ে , ঠকিয়ে ,ভয় দেখিয়ে একদল কামিয়ে যাচ্ছে অন্যরা মুখে বুড়ো আঙুল চুষছে আর দাঁত কেলাচ্ছে । মেয়েরা মেকাপ করতে সময় নিক ,ছেলেরা তা তারিয়ে তারিয়ে দেখুক ,সৈন্যরা দেশের জন্য যুদ্ধ করুক , রাজনীতিবিদরা জলঘোলা । পাচুরা চা করুক দোকানে , টনিরা ইংলিশ মিডিয়ামে পরুক আর দুনম্বরিকে সেলাম , ভালোকে অবজ্ঞা, যে ডুবছে ডুবুক আমরা চোখ বুঝে থাকি তাই দেখতে ভুলে যাই সামনে পচাডোবা আছে নষ্ট হয়ে  যাওয়া এই সমাজের । 

আমার স্বভাব খারাপ , তাই বাজে কথাই লিখি , স্বজনহীন ,বন্ধুহীন , বিবেকহীন এই সমাজে শব্দখোঁচা রাখি ।  


ভগবান"


অপরাধীদের জয় জয়কারে

ভীতু ভগবান মুখ লুকিয়ে থাকে।

সততা মানুষকে দুর্বল করে তোলে,

ব্যর্থ বিবেক হার মেনে নেয় শয়তানের কাছে,

কাঁদতে কাঁদতে হৃদয় একসময় চুপ করে যায়।

নির্লজ্জ মানুষেরা বুক ফুলিয়ে ঘোরে,

আমরা গল্প বলি পুণ্যের যা সত্য নয়,

কারণ পাপীরা শাস্তি পায় না,

কষ্ট পায় হৃদয়বানেরা,

যারা ভালো কিছুর জন্যে

মৃত্যুকেও হাসিমুখে বরণ করে।

তবু এই অন্ধকার জগতে খারাপের ভালোতে

 লজ্জায় মুখ লুকোয় ভগবান।

গ্রামের পথে--গৌরী মৈত্র


গ্রামের পথে--
গৌরী মৈত্র 


বৈশাখী ধুলোর ঢল,মরু চরাচরে জীবন জেগেছে, 

বাতাসেও বেড়েছে উষ্ণতা, তাই বনস্পতির কামনা 

তীব্র এখন জ্বলন্ত রুক্ষতায়,ক্রমশঃ সে দাহ

পৌঁছে যাবে বর্ষার মেঘমালায়;

এই অভিরুচি নিয়ে গ্রাম্য পাখিটি ছুঁড়ে দিলো হঠাৎ 

প্রশ্ন কুহূ ঃ খেয়ালী মেয়েটি চলে গেছে নাকি চৈত্রমাসে

শেষের তারিখে? ধুলোভরা বাতাসে ভর দিয়ে এক

শূন্য ডাল নেচে উঠলো, জানে নাকি ও জবাবটা! 

এভাবেই যাতায়াতে পুনঃ পুনঃ দৃৃশ্যাবলী পাল্টে যায়, 

পাল্টায় হৃদয়ের বসন্ত, বৈশাখ,এই চৈত্রের মাস--

যেখানে উপসংহার--সীমা ব্যানার্জী রায়


যেখানে উপসংহার--সীমা ব্যানার্জী রায়


পৃথিবীতে বড় বেশী দুঃখ আমি পেয়ে গেছি, অবিশ্বাসে

প্রহরীর মতো একা, সুখ ও অসুখ নিয়ে ওষ্ঠাধর ত্রাসে

:

নিজেই বেছেছি এই পথ, ফেরার অন্য নেই পথ

জীবন ও মানুষের হাঁটা চলার ভাষা-বড় বেশি শ্লথ

:

'ভাষা' শব্দটি যেন প্রকৃতির গাণিতিক সংকেতের খেলা

পরস্পর কথা বলে, স্বপ্নের ভিতর এক স্বপ্ন দুয়ার খোলা 

:

তীব্রভাবে বেজে ওঠে কৃ্তঘ্ন শব্দের রাশি

এখন আমার ধ্যান আর বিস্মরণ নয়, কেবলি রশি

:

যেন আমি পার্থিব আলোয় খুঁজি  জীবনে বিস্ময়ের অশ্রুজল

সামান্য শরীর ঘিরে পরে নিয়েছি অনন্তের কঠিন শৃঙ্খল 

:

এত আলো-বাতাস, তবু দীর্ঘশ্বাসে দুলে ওঠে বিষণ্ণতা 

জীবনের নিয়ম ও নিয়মহীনতায় সর্বনাশা শূন্যতা

     :

     হাহাকার মেশা উচ্চারণে আমি পরিত্রাণ চাই

     মুহূর্ত বিমূর্ত হয়, দূরত্বকে শান্তি ভেবে যাই

     :

     অসহিষ্ণু বাসনায় নিজেকে ঢেকেছি অবিরত

     দিনের আলোয় ভীরু প্রাণ জোনাকির মতো

     :

     চতুর্দিকে জনারণ্য দেবে শুধু অতৃপ্তির জ্বালা

     ছোট ছোট সুখ দুঃখ নিয়ে বাঁচার নাম নিরালা

     : 

নিয়তি বদল করে, আলো-ছায়া -আলো ঘোরে পাংশু ঈর্ষার

তার চেয়ে, দূরে চলে যাবো, সীমার যেখানে উপসংহার


       ******

তুমি থেকো* - ইমতিয়াজ কবির

 


*তুমি থেকো*

           - ইমতিয়াজ কবির 


তুমি আছো তাই

আজো সবুজের দেখা পাই

তুমি আছো তাই 

আজো পাখি গান শোনায়

অগ্রগামী সভ্য মোরা

অগ্রগতির শিখরে চড়ে,

নতুনের নামে ভাঙি

স্থায়ী চির নতুন

সৃষ্টির ব্যর্থ প্রচেষ্টায়!

নিজেদেরই করি উদ্বাস্তু

সীমাহীন ছাদের নীচে;

প্রকান্ড অট্টালিকাও

দেয়না নির্ভরতা , নিশ্চ়য়তার আশ্বাস।

তবু বেঁচে আছি সরীসৃপের মত

ধোঁয়া শুধুই ধোঁয়া চারিদিকে

নেই সর্বভুক নেই শিখা 

আছো তুমি প্রাণে বিশ্বাস!

কাঁদে আজও সবুজের ফাঁকে

নিঃস্বার্থ সভ্যতার মূল্যদাতা!

ওদনহীনা শূন্য জঠর দুর্বল পানি

আম্বরহীনা মুন্ড- কলেবর উচুঁ তর্জনী,

ধর্ম কর্ম বেচেছি সস্তায়

কিনেছি অচল মান বস্তায়

সভ্যতার নামে ছড়ায়ে অসভ্যতা

পণ্য করেছি রমণী- নন্দিনী- জননী!


মিশায়ে গরল সমীরণে সাজি বিশ্বত্রাতা

অর্ঘ্য- সম ভ্রান্তি বিলাস

কুজন - আধি শুনবে কৈলাশ?

কার তরে মান কিসের অভিমান

কোন লোভে শত- প্রাণ করছি হনন!

শতবর্ষ ধোয়া ললাট

ঠুকিলেও ঠকা ঠক

পন্ডশ্রম করবে চাতক

তবু নাহি ঘুচবে পাতক।

জীব হয়েও না জীব - সেবা

মিছে তবে যাবি ' কাবা ' !

ভদ্র নয় তুই ইতর হবি

জিন্দা হলেও তুই যে ছবি 

চালাক ভাবিস? বড়ই বোকা

নিজেই নিজেকে দিচ্ছি ধোঁকা

যোগ বিয়োগের হিসাব ভুলে

মানুষ হ ' ভাই বদ্ধ- মূলে। 



যুদ্ধকথা মনিরুজ্জামান প্রমউখ


যুদ্ধকথা 

মনিরুজ্জামান প্রমউখ 

------------------------------------- 

বারবার যুদ্ধের দামামা গড়ে 

কী পাও তোমরা? 


ক্ষত আর যন্ত্রণার 

অভিশপ্ত পাড় ভেঙ্গে 

যোদ্ধা পৌঁছে স্বর্গে। 

সেখানে তার দেশ, সন্তান, 

প্রিয়তমার হাত অধরা। 


অচেনা নগরী আর নাগরিক 

জানেনা রক্তলালের সমীক্ষা।

জীবনের অভিসারে -- মহাজিস মণ্ডল


জীবনের অভিসারে

মহাজিস মণ্ডল


সময়ের নদী ছুঁয়ে দেখি

আলো আর অন্ধকার

পরস্পর খেলা করে


শূন্যতারা বসে নেই কোথাও

নিরুদ্দেশে উড়ে যাচ্ছে মেঘ

অবিশ্রান্ত বৃষ্টির খোঁজে


স্বপ্ন বুকে প্রদীপের মতো জ্বলে

নক্ষত্রও জ্বলে আকাশে

অনন্ত জীবনের অভিসারে...



মধ্যবিত্তের পরম্পরা --নারায়ণ রায়


মধ্যবিত্তের পরম্পরা --নারায়ণ রায়


ছোট্টবেলায় পাড়ার নীরেনদার দোকানে

বোয়েম ভর্তি সাজানো লেবু লজেন্স।

পরাধীন মনটা চাইতো, কিনি আর খাই,

বাবা বলতেন, ওগুলো খেলে পেটে কৃমি হয়।

মনে মনে ভাবতাম, যখন স্বাধীন হ'ব

তখন দু'পকেট ভরে কিনবো আর খাবো,

তখন তো জানতাম না যে, 

আমি কোনদিনই স্বাধীন হ'ব না।

আমার বাবাও কোনদিন স্বাধীন ছিলেন না,

তার বাবাও ছিলেন না।


কলেজে পড়ার সময়ে বন্ধুরা বলতো

চল, দিলখুসের কাটলেট খাবো,

মুখে বলতুম ক্ষিধে নেই,

আর মনে মনে ভাবতুম, যখন ক্ষিধে পাবে,

তখন দুপ্লেট ভর্তি কাটলেট 

আর কবিরাজি খাবো।

তখন তো জানতাম না যে,

আমার কোনদিনই ক্ষিধে পাবে না।

এখন মনে পড়ে, আমার বাবারও

কোনদিন ক্ষিধে পেত না,

তার বাবারও ক্ষিধে পেত না।


সঞ্চালি বলত, তোকে আমার খুব ভালো লাগে,

আমি  বলতাম, আমার ভালো লাগে না।

মনে মনে ভাবতাম যখন আমার খুব প্রেম পাবে,

তখন তোকে আমি খুব, খুব করে ভালবাসবো,

তখন তো জানতাম না যে, 

আমার কোনদিনই প্রেম পাবে না।

আমার বাবা-মাকে কোনদিন 

পাশাপাশি বসে একটু গল্প করতেও দেখিনি,

তাদের বাবা-মা'দেরও 

নিশ্চয়ই কোনদিন প্রেম পেত না!


বিয়ের পর বৌকে বললাম, পুজোর ক'দিন

নাইবা ঠাকুর দেখলে! বরং ওই কদিন

কাজ করলে কিছু টাকা পাবো,

তোমার একটা শাড়ি হবে।

ঠাকুর না হয় পরের বছর দেখবো।

তখন তো জানতাম না যে,

ঠাকুর আমার কোনদিনই দেখা হবে না!

আমার বাবা-মাও কোনদিন 

ঠাকুর দেখতে বেরোয় নি,

তাদের বাবা-মাও

কোনদিন ঠাকুর দেখে নি।


ছেলে বললো, বাবা ইলিশ মাছ খাবো,

আমি বললাম, দূর বোকা ইলিশ খেলে

পেট খারাপ হয়।

তার চেয়ে বরং চল, আজ রাতে আমরা

বেগুন পোড়া দিয়ে মুড়ি খাই।

মনে পড়ে বাবা বলতেন, 

কারখানার লক আউটটা উঠলেই 

একটা মাছের মুড়ো কিনবো,

মাছের মুড়ো দিয়ে, পুঁইশাক খাবো।

বাবার আর কোনদিনই মুড়ো দিয়ে

পুঁইশাক খাওয়া হয়নি,

তার বাবারও নিশ্চয়ই খাওয়া হয়নি।


অথচ বংশের পরম্পরা তো মানতেই হবে,

আজ যখন আমি অসুস্থ হয়ে প'ড়লাম;

জ্ঞান হয়ে দেখি, শুয়ে আছি

হাসপাতালের দোতলার তিন নং বেডে,

কি আশ্চর্য আমার বাবাও ছিলেন 

এই হাসপাতালের এই একই বেডে,

আর সেদিনও ছিল আজকের মতই 

পাশের পর্নমোচী গাছটা পত্রহীন।

বাবা আর বাড়ি ফিরে যাননি,

শুনেছি তার বাবাও এই হাসপাতালের 

এই বেডেই........।

তবে কি আমিও..........?

ইন্দ্রানী বন্দ্যোপাধ্যায়ের তিনটি কবিতা --


ইন্দ্রানী বন্দ্যোপাধ্যায়ের তিনটি কবিতা --

ভালোবাসা


এখন পাখির অবশ ডানা

বিফল যে তার স্বপ্নখানা

ভেবেছিল জীবনখানা

অসীম ডাকে কাটবে।


ভোর হতে সে ঘর ছাড়ল

বিভুঁই আকাশ আপন হল

ভাবলে মনে এই আছি বেশ

ঘরের মায়ার থাকল না রেশ।


আকাশ পথে পাড়ি দিল

ডানার শক্তি বুঝে গেল

আকাশ বলে পাগল পাখি

ঘরের দিকে ফেরাও আঁখি।


পাখির চোখ জলে ভরা

আকাশ কে যায় না ধরা।

কন্ঠে এল বিরহগান

সুরে সবার প্রাণ আনচান।


অবশডানা ঝাপটে চলে

হৃদয়ে প্রেম কথা বলে।

আকাশ পাখির ভালোবাসা

বুকের মধ্যে ছোট্ট আশা।


নাই বা হল মিলন ওদের

ছোট্ট আশা কম বা কিসের?


তোমার অসীমে


এবার যখন যাবো চলে

কিচ্ছুটি না কথা বলে

নীরব হয়ে শান্ত হয়ে

শিউলি ফুলের মতো


তুমি যখন বাঁশির সুরে

খুঁজবে আমায় উদাস সুরে

প্রতিধ্বনি ফেরত পাবে

অধীর হয়ে আমায় চাবে।


খুনসুটি আর কাঙালপনা

চাইবে যখন হৃদয়খানা

আকাশ পানে চাইবে তখন

চাঁদপানা সেই মুখখানা।


আমার তখন আমোদ ভারি

পরনে নীলাম্বরী শাড়ি

আকাশ হয়ে ধরা দেবো

অনন্তেরই ডাক শোনাবো।


তোমার বাঁশি ডাকবে আমায়

দিগন্তরে দূর নীলিমায়

আকুল করা সেই সুরেতেই

মুক্তি পাবো  মুক্তি পাবো।


যদি বৃষ্টি নামে



যদি বৃষ্টি নামে

তবে অনেকটা ভিজবো

আর অনেকটা ভালোবাসবো।

বৃষ্টি মানে তো ভালোবাসাই।


যদি বৃষ্টি নামে

উথাল পাথাল উদাস হাওয়ায়

উড়বে আমার কেশদাম।

আমার চোখের পাতা

ভিজে নরম হবে

বৃষ্টির আদরে।


বৃষ্টি মানেই তো তুমি।

তুমি তো বৃষ্টি বাউল।

হাতে তোমার একতারা।

উদাস সুরে ভাসবো দুজন

হাসবো তখন কলকলিয়ে।


এমনি যদি বৃষ্টি আসে

হৃদকমলে অচিনপুরে।

মায়ার কাজল ছড়িয়ে দেবো

ভরবে জীবন গানের সুরে।

শ‍্যামাপ্রসাদ সরকারের দুটি কবিতা --


শ‍্যামাপ্রসাদ সরকারের দুটি কবিতা --


স্বেচ্ছা...


আমার পার্থিব আমি 

তোমার কাছে জমা করে দিয়েছি বলে

শুধু অপার্থিব প্রেমকে কাছে রেখে দিয়েছিলাম।


আবেগমহলে সে এসে বসত করুক

ঠোঁটের পলাশবিতানে একা পদচারণায়

দিয়ে যাক গোপনে সেই ঘুঙুরের ডাক।


সেদিন সে  ডেকেছিল বলে 

আজ না হয় চলে যেতে চাইলাম!

ক্ষমা চেয়ে জীর্ণ মুঠোয় বাড়ানো

যা ছেড়ে দেব বলে  কথা দিয়েছি,

আসল সম্পদভার, প্রেম বেলাগাম!


অপসৃয়মান


কি করে বোঝাব আর

ওষ্ঠে অঙ্গুলী ছুঁয়ে 

তুমি আমাকে আসলে

 স্তব্ধ থাকতেই বলেছ।


বিষপানে অমোঘ মৃত‍্যুর যাচনা

তোমার অরণ‍্যমেখলা দেখেও

আমি তো চেয়েছি, কতবার।


শখের অলকানন্দা জলে ডুবে গেছি

তন্মধ‍্য আসঙ্গের খড়কুটো

শুধু ধরতে চেয়ে, চিৎকার করেছি!


কি নির্মোহ দৃষ্টিপাতে,

তুমি একাকীত্বের সাধনায়

আমাকে ক্রমশ সিদ্ধ করতেই চেয়েছ!


হে ভাবীকাল!

 তবুও তুমি দূরাগত কেন?

কেন ছেড়ে গিয়েও বারংবার,

রেখে গেছ অভ‍্যাসের ডাকনাম!


.....


26/04/2022

বীরেন্দ্রনাথ মন্ডলের দুটি কবিতা--


বীরেন্দ্রনাথ মন্ডলের দুটি কবিতা--


পর্ণকুটির 




আমি এখন ভীষণ ব্যস্ত থাকার কুটির বানাতে। 

যত কিছু সরঞ্জাম জোগাড় করছি মনের হরষে ।

মনটাও বেশ  প্রফুল্লিত নতুন সৃষ্টির  আনন্দে। 

মনের মায়াজালের কাঠকুটো সবই  পাচ্ছি। 

অনায়াসে  হাতের নাগালের ভিতরেই। 

সে খুব সূক্ষ্ম ঐন্দ্রজালিক পরিপক্ক কাঠামো 

তোমার ধ্যানের  আলো এখানে পৌঁছাবে না গো। 

দিয়েছি বেড়াজাল নানারকম ঐশ্বরিক শক্তিতে ।

তুমি ভেবেছো ধ্যানের সূক্ষ্ম তরঙ্গে মিলিত হবে। 

সে এক  বিদ্যুৎ ঝলকের  সংস্পর্শ সূক্ষ্মতম। 

শারীরিক নয় মানসিক নয় সাংকেতিক। 


দরজা-জানালা সব শক্তি তোমার চোখের পলক। 

ঘরের ছাউনি আচ্ছাদিত তোমার দেহের রোমকূপ। 

চারিদিকের সীমানা আলুলায়িত কেশ কুন্ডল ।

পর্ণকুটির যে তোমার সুশ্রী মুখমণ্ডল। 


আমি সরোবরে স্নান  করে পরিধান স্বর্ণ পদ্মপত্র। 

উত্তরীয়টি সে এক  অভূতপূর্ব লতাগুল্ম দল। 

শ্বেত চন্দন কপালে লেপন ঋষিমুনি অবিকল। 

ধানের আসন সে মৃত্তিকা শ্বেত পাথর দ্রুমদল। 



আশ্রমবাসী 


আমি এখন সংসার ত্যাগ করেছি। 

গভীর জঙ্গলে একটা গাছ তলায় থাকি । 

প্রায়ই চোখ বন্ধ থাকে। 

মাঝে মাঝে তাকাই অর্ধ নিমীলিত। 

চারিদিকে সবুজ বনানী বাতাসে আন্দোলিত। 

যথেষ্ট ফুল ফুটে থাকে বুনোফুল। 

কিছু নাম জানি কিছু জানিনা 

বড় শান্তি পাই মনটাও বেশ ভালো। 


ক্ষুধায় কিছু ফলমূল খেয়ে বেশ আছি। 

স্নিগ্ধ হাওয়া কথা বলে আমার সাথে। 

পাখিরা গান গায় তাদের নিজস্ব ডাকে। 

পাশে টলটল একটা সরোবর। 

সেখানে ফুল প্রজাপতি ভ্রমরের খেলা চলছে। 

আকাশ এখানে ঘন নীল সাদা মেঘ। 

হরিণ শিশু খরগোশরাও লাফালাফি করে বেশ। 

ভালো একটা আশ্রমে  যেন আছি বসে। 


ভাবছি একটা মনোমত কুটির বানাবো। 

চোখ বন্ধ মাঝে মাঝে খুলে আবার বন্ধ করি। 

স্বর্গীয় আনন্দে আছি বেশ ভাল আছি। 

একটা হরিণশিশু এল লাফিয়ে কি যেন খুঁজছে। 

অদূরে দাঁড়িয়ে মা হরিণ তাকিয়ে আছে। 

যেন বলছে আয় বাছা আমি এখানে। 



** বীরেন্দ্রনাথ মন্ডল, 28 এপ্রিল 2022।

ভুবনেশ্বর, ভারতবর্ষ । 

Thursday, 5 May 2022

সম্পাদকের কলমে--


সম্পাদকের কলমে--

লেখালেখি অনেকটা মনের ব্যাপার। যখন সময় কাটতে চায় না, মন ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে, সবকিছু ভুলে যাবার তাগিদে আমরা অনেকেই কলম ধরি। এতে অন্তত মানসিক সান্তনাটুকু আমরা খুঁজে পেতে পারি। নিজেকে কিছুটা সহজ স্বচ্ছন্দ অনুভব করতে পারি।

অর্থের দিক থেকে প্রাধান্য না দিয়েই শুধু মন সংযুক্তির জন্য আমরা মনের কথা গল্প কবিতায় লিখে যাই।

আমাদের অনেকের কাছে আবার লেখাটা অনেকটা নেশার মত মনে হয়। রং পানিয়ের পিপাসায় অনেকে যেমন মাতাল হতে চাই। তেমনি কুণ্ঠা দুঃখ বিষাদ লেখালিখির মধ্যে দিয়ে ভুলে যেতে চাই। 

লেখার মধ্যে ডুবে থেকে নিজের মনের প্রকাশ, শোক-সন্তাপ, প্রেমভাবনা আমরা উজার করে দিই, নিজেকে মেলে ধরতে পারার মনন বুঝি মন পাতার ভাবনা থেকেই উঠে আসে!

অবশেষে অনুরোধ, আমাদের কবিতা পত্রিকা, স্বরধ্বনি পড়ুন। কবির মনের ভাব ভাবনা প্রতিফলিত হোক পরস্পরের মন দর্পণে, মন্তব্যে উঠে আসুক ভালো মন্দের বিচার। নিবেদন ইতি-- তাপসকিরণ রায়।

সহ সম্পাদকের কলমে--বৈশাখ এলে রঙ তুলি দিয়ে এ হৃদয় ছবি আঁকে, আনন্দ গানে মেতে ওঠে প্রাণ পঁচিশে এ বৈশাখে

সত্যিই, বৈশাখ মাস এলেই মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে ওঠে। সে হয়তো নতুন বছরের আগমনের কারণে যে খানিকটা হয়না এমন নয়, তবে এই আনন্দের বিশেষ কারণটা হলো এটা কবিগুরুর জন্মের মাস। আর কী আশ্চর্য! তাঁর সব পরিচয় ছাপিয়ে  বড়ো হয়ে ওঠে কবি পরিচয়। 

পয়লা বৈশাখের পর একটা একটা করে দিনগুলো পার হয়ে ঝপ করে এসে পড়ে পঁচিশে  বৈশাখ। পঁচিশে বৈশাখে ,প্রখর তপ্ত দহনের দিনে যেন প্রাণের প্রবাহ ধারা যায় বয়ে। সবাই  উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে। মেতে ওঠে কবিতায়, গানে। এই অনাবিল আনন্দে সামিল হতে আমরাও সকল দুঃখ-দৈন্য, ক্লান্তি ,শ্রান্তি ভুলে মেতে উঠতে চাই কবিতার মধ্যে।--সাবিত্রী দাস। 

রাত ভর রোমান্টিক গল্প--সন্ধ্যা রায়


রাত ভর রোমান্টিক গল্প--
সন্ধ্যা রায়


রাত ভর রোমান্টিক গল্প মানে তুমি তার প্রেমিকা নও, পারমিতা !

সাক্ষাতের অপেক্ষায় আমি। 

ইচ্ছে ভালোবাসার অনুভূতিগুলোকে কবর দিয়েছি--

জমাট বাঁধা বেদনাকে মুছে ফেলেছি,

ছিঁড়ে ফেলে টুকরো টুকরো করে জমিয়েছি এক  আকাশ স্মৃতি।

সত্যি ভুলতে পেরেছো কি আমাকে পারমিতা? 

একরাশ অভিমান বুকভরা অক্লান্ত বেদনারা স্বপ্নের ভীড়  করে আমার চোখের পলকে 

আঙ্গুলের ফাঁক গোলিয়ে চলে গেছো মনে হয়। 

মনে করে দেখেছ কি হাতটা আমার হাতেই ধরা!

অকথিত চোখের জল, ব্যথিত  মনের গুমরানি সহ্য হয় না আর, পারমিতা!

বিশ্বাসগুলো আর বেঁচে নেই সব হারিয়ে গেছে-- 

হে মাটি মা দুভাগ হও মুখ লুকিয়েই বাঁচি।

নিকট অথচ দূর--মহুয়া বিশ্বাস


নিকট অথচ দূর--মহুয়া বিশ্বাস

-----------------------------


নিকট অথচ দূর সম্পর্কের জালে আবৃত আমার  হৃদয়-চোখ-মন

প্রাণহীন....প্রায় মৃত‍্যু যন্ত্রনার অধিক;

চোখের ভুল পর্দার আড়ালে--

সেখানে নেই প্রাণের স্পন্দন... বন্ধন..

অগোচরেই শিথিল.....মিথ‍্যা আলিঙ্গনের চিত্রপটে;

যেন মায়াচ্ছন্ন ছায়াছবি;

অযথা বাকচাতুর্য....অযথা প্রসাধন অতিরঞ্জিত করার প্রয়াসে ব‍্যর্থ  হৃদয়ের সব ব‍্যকুলতা;

স্বাধীন হৃদয়েও  পরাধীনতার নির্মম দাসত্ব ;


বহু দূর থেকে ভেসে আসা 

বাতাসে ফুলের সুগন্ধের মতো মনের কোণে কোণে গভীর বিস্ময়ে পৌঁছে যাওয়া স্নিগ্ধতার মত সুদৃঢ় সম্বন্ধ হৃদয়ের গভীরে গড়তে চাই....

হৃদয়ের সুগন্ধে যে হৃদয় আকুলিত....সুবাসিত..

সেই হৃদয়ই ভালো বৃক্ষের সন্ধান;

 ক্ষুদ্র বাসা বাঁধতে ঘুমন্ত পাখিরা জেগে ওঠে  হঠাৎ!

বহুদূর থেকে বাতাসে বাতাসে সুর -সন্ধ‍্যা ভেসে আসে

মনের চারিধার তখন সুস্থির

প্রশান্তির ধ‍্যানে  মগ্ন....

হৃদয় তখন গভীর আত্মানুভূতির  আবেশে চিরআচ্ছন্ন।


----------------------🌷মহুয়া বিশ্বাস

অদিতি ঘটকের দুটি কবিতা--

অদিতি ঘটকের দুটি কবিতা-- জীবাশ্ম আর পাপোশে ধুলো ঝেড়ে ঘরে ঢুকি না  কারন ধুলোই আমার আবাস আর আমি সেই ধুলোর মধ্যে মিশে থাকা জীবাশ্ম ...